WB School Reopening Guidelines – আগামীকাল থেকে স্কুলে মানতেই হবে এইসব নিয়ম

রাজ্যে বেশ কিছুদিন হলো নবম থেকে দ্বাদশ শ্রেণী পর্যন্ত ক্লাস চালু হয়েছে (School Reopening)। প্রথম সপ্তাহের রিপোর্ট ও পর্যালোচনা ইতিমধ্যেই শিক্ষকদের কাছ থেকে ভার্চুয়াল কনফারেন্সেই নিয়েছে শিক্ষাদপ্তর। তার সাথে শিক্ষক ও পড়ুয়াদের নানাবিধ সমস্যা নিয়ে ও আলোচনা হয়েছে। তার জন্য বিশেষজ্ঞ কমিটি ও নিযুক্ত আছে রাজ্যে। অতিমারীর আবহ কাটিয়ে কিভাবে সুষ্ঠুভাবে স্কুল চালু রখা যায় সেই পরিকল্পনা ও চলছে যথাযথ। (online education)

ইতিমধ্যেই এই আবহে কিভাবে ক্লাস করা যায়, কিম্বা অতিমারীর ভয় কাটিয়ে কিভাবে স্বাভাবিক হবেন শিক্ষক থেকে পড়ুয়া, তাই নিয়ে একটি ভিডিও ও করা হচ্ছে, রাজ্যের স্কুল শিক্ষাদপ্তর। কিন্তু তার আগে বিশেষ নির্দেশিকা দেওয়া হলো। এতদিন পর স্কুল খোলায় (School Reopening) কি কি সমস্যা হচ্ছে, কিম্বা আর কি সমস্যা হতে পারে, এবং সমস্যা হলে কি করনীয় এবং কিভাবে স্কুলে আবার নিজেকে অভ্যস্ত করতে হবে, সেই নিয়ে রইলো বিশেষ নির্দেশনা।

ব্রেকিং নিউজ, দাবী মেনেই কমে গেল স্কুলের সময়, একদিন পর একদিন ক্লাস

বিশেষজ্ঞ কমিটির পর্যবেক্ষণঃ

স্কুলের শিক্ষক ও পড়ুয়াদের বায়োলজিক্যাল ক্লক গত পৌনে দুই বছরে বদলে গিয়েছে। সুতরাং স্কুলের অভ্যেস ফিরে আসায় কিছু পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে তাদের যেতে হবে। তবে স্কুলে ফেরার আনন্দও তো কম নয়। দীর্ঘ দিন পরে স্কুলে ফিরে স্টুডেন্টরা যেমন খুশি, তেমনি ক্ষুদেদের পেয়ে আনন্দিত শিক্ষকেরাও। মাঝে যখন স্কুল খুলেছিল, তখন পড়ুয়াদের মধ্যে ভয় দেখা গিয়েছিল। কিন্তু এ বার ওরা বেশ হাসিখুশি। এ বার স্কুলের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে হবে। তাই অনেক বিষয়ে নজর রাখতে হবে। (School Reopening)

১) এত দিন পরে বন্ধুদের সঙ্গে ক্লাস করার আনন্দে নিরাপত্তার দিকটা ভুলে গেলে হবে না। মাস্ক পরা, দূরত্ব বজায় রাখা, হাত স্যানিটাইজ় করার অভ্যেস ধরে রাখতে হবে স্কুলেও। দীর্ঘক্ষণ মাস্ক বা ফেসশিল্ড পরে থাকা নিয়ে কেউ মজা করতে পারে। কিন্তু নিজের সাবধানতা নিজের কাছে। বিশেষ করে গল্প করার সময় মুখ থেকে মাস্ক নামানো চলবেই না।

২) বাড়িতে বসে অনলাইন ক্লাসে (online education) সকাল সকাল ওঠা রেডি হওয়া, স্কুল ব্যাগ নিয়ে ছোটা এগুলি ছিল না। কিন্তু স্কুল শুরুর পরে সকাল সকাল ঘুম থেকে ওঠার অভ্যেসও শুরু। শরীর বিদ্রোহ করতে পারে। দরকারে ঘুম থেকে উঠে একটু ওয়ার্মআপ করতে হবে ছাদে বা বাড়ির সামনের কোনও পার্কে। কারণ বাড়ি থেকে তৈরি হয়ে বেরিয়ে স্কুলে পৌঁছনোর ধকলও সওয়াতে হবে শরীরে।

৩) এত দিন নিয়মিত রাস্তায় না বেরোনোয় অধিকাংশ ছেলেমেয়ে ধুলো, ধোঁয়া ও দূষণ থেকে দূরে থেকেছে।এবার নিয়মিত বেরোনো শুরু হলে অ্যালার্জি বা সর্দিকাশির সম্ভাবনা প্রবল। যাদের শীতে হাঁপের সমস্যা হয়, চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে তাদের সতর্ক থাকা দরকার।

৪) ক্লাসওয়ার্ক ও হোমওয়ার্ক নিয়মিত করার অভ্যেসে ফিরতে যেমন সময় লাগে, তেমনটাই সময় দিতে হবে শিক্ষকদের কে। নজর দিতে হবে পড়ুয়াদের হাতের লেখায় আর বানানে। প্রথম প্রথম কারো স্কুলে আসতে দেরি হতে পারে, তারজন্য কড়া মনোভাব না নেওয়াই শ্রেয়। তবে শৃঙ্খলা বজায় রাখতে হবে। আর যে দিন প্র্যাক্টিকাল ক্লাস থাকে, সে দিন ও বেশি নজর দিতে হবে। কারন এই দুই বছরে হাতে কলমে পড়ুয়ারা কিছুই করেনি।

৫) ক্লাসে তাড়াতাড়ি নোটস নেওয়ার অভ্যেসে ফিরতে হচ্ছে। স্ক্রিনশট নেওয়ার আর সুযোগ নেই। তাই অভিভাবককে ও নজর রাখতে হবে, সন্তানের লেখালিখি ও হোমওয়ার্কের দিকে। এত দিন পরীক্ষাও চলেছে বাড়িতে। নিয়মকানুন কিছুটা হলেও হয়তো শিথিল ছিল। এখন থেকে ক্লাসে শিক্ষকশিক্ষিকার পাহারায় পরীক্ষা দিতে হবে। এর জন্য বাড়িতে পরীক্ষা দেওয়ার অভ্যেস করতেই হবে।

৬)দীর্ঘ অনভ্যেসের ফলে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা প্রায় তলানিতে। টিফিন এবং জল শেয়ার করার ক্ষেত্রে সাবধান থাকতে হবে। পেন, পেনসিল, ইরেজ়ার শেয়ার করা গেলেও খাবার এখন ভাগ না করাই নিরাপদ।

মানসিক প্রস্তুতিঃ

দীর্ঘ দিন স্কুল বন্ধ থাকায় অনেকের স্কুলের প্রতি অনীহা ও নানা মানসিক সমস্যা দেখা দিতে পারে, যেমন,

১) মিশতে না পারার সমস্যা। একা ক্লাস করে সে অভ্যস্ত। কিন্তু স্কুলে বন্ধুদের সঙ্গে রোজ দেখা হবে। ফলে আগের মতোই ঝগড়াঝাঁটি হলে তা মিটিয়ে নিতে হবে। যাকে অপছন্দ, তাকেও মেনে নিতে হবে।

২) ডিজিটাল আসক্তি কাটাতে হবে। বাচ্চারা মোবাইল ও ল্যাপটপের বিনোদনে অভ্যস্ত হয়ে গিয়েছে। ক্লাসের ফাঁকে কেউ সিনেমা দেখছে, কেউ গেম খেলছে। এই ধরনের বিনোদন আস্তে আস্তে অভিভাবকদের নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। নিয়মানুবর্তিতার মধ্যে সন্তানকে ফিরিয়ে নিয়ে যেতে হবে। না হলে স্কুল কামাই করার প্রবণতা দেখা দিতে পারে।

৩) ভয় কাজ করতে পারে মনের মধ্যে। অনেকেই প্রিয়জন হারিয়েছে করোনায়। তা ছাড়া সকলের টিকাকরণ না হওয়ার ফলেও আতঙ্ক দেখা দিতে পারে। ছোটদের সামনে কখনও ভয়, দুশ্চিন্তার কথা আলোচনা করবেন না। স্কুল খোলার কী দরকার?, কিম্বা স্কুলে গেলে করোনা হবে না তো ! এ ধরনের নেতিবাচক কথা বলবেন না সন্তানের সামনে। বরং সন্তানকে সঙ্গে নিয়ে একটা নতুন স্কুলব্যাগ, ডায়েরি বা জলের বোতল কিনে দিন। এতে সে ও মনে মনে প্রস্তুত হবে।

৪) টেনশন কাজ করতে পারে। হয়তো কোনও বাচ্চা স্কুলে বুলি হত, ক্লাসে পড়া পারত না বা কোনও শিক্ষক শিক্ষিকাকে ভীষণ ভয় পেত। তারা কিন্তু অনলাইন ক্লাসে বেশ নিশ্চিন্ত ছিল। তাদের জন্য স্কুলচত্বরে পা রাখা বেশ উদ্বেগের। তাই আপনার সন্তান যদি স্কুল যাওয়ার সময়ে টেনশন করে, তার সঙ্গে কথা বলুন। ওর সমস্যা মেটাতে সাহায্য করুন।

৫) সমস্যা এখানেই শেষ নয়, আরও গভীরে তার শিকড়। স্কুলছুটের সংখ্যা কিন্তু বাড়ছে। অনেক ছেলেই বিভিন্ন কাজে যুক্ত হয়ে গিয়েছে। অনেক অভিভাবক আবার টিকাকরণের আগে সন্তানকে স্কুলে পাঠাতে ইতস্তত করছেন। স্কুলে এলেও ওরা দীর্ঘক্ষণ মাস্ক পরে হাঁপিয়ে উঠছে। তাই মাঝেমাঝে মাস্ক খুলে একটু শ্বাস নেওয়ার সুযোগও করে দিতে হচ্ছে। আর একটা সমস্যা বাথরুমের। নিয়মিত স্যানিটাইজ় করা বাথরুম দরকার ওদের জন্য।

আপনাদের আরো কোনও মতামত থাকলে নিচে কমেন্ট করতে পারেন।

আরো পড়ুন, প্রাথমিক থেকে অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত ক্লাস কবে শুরু হবে

শেয়ার করুন: Sharing is Caring!

Leave a Comment