খুব শীঘ্রই উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীদের একাউন্টে ফের ১০ হাজার টাকা করে ঢুকতে চলেছে। এই টাকা ট্যাব বা স্মার্টফোন কেনার জন্য পড়ুয়াদের রাজ্য সরকারের তরফ থেকে দেওয়া হচ্ছে। এর আগেও উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীদের ট্যাব বা স্মার্টফোন কেনার জন্য ১০ হাজার টাকা করে দেওয়া হয়েছিল।
অতিমারি পরিস্থিতির সময় থেকেই অনলাইনেই পড়াশোনা শুরু হয়েছিল সমস্ত পড়ুয়াদের। শহরাঞ্চলের দিকে বহু পড়ুয়াদের একাধিক স্মার্টফোন থাকলেও প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলের আর্থিকভাবে পিছিয়ে পড়া পরিবারের ছাত্র-ছাত্রীদের সেই অর্থে কোনো স্মার্টফোন ছিল না। ফলে অনলাইনে তাদের পড়াশোনা করা অসুবিধা হচ্ছিল। সেই সমস্যার দিকে লক্ষ্য দিয়ে সরকারের তরফেউচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীদের বা পড়ুয়াদের জন্য ট্যাব বা স্মার্টফোন কেনার জন্য ১০০০০ টাকা করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীদের টাকা কবে ঢুকবে?
এই প্রকল্পটির নাম তরুণের স্বপ্ন। আজ সোমবার শিশু দিবসের এক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কিছু উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার পড়ুয়াদের হাতে ১০ হাজার টাকা করে তুলে দেবেন। তারপরেই সমস্ত উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীদের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে ১০ হাজার টাকা করে পৌঁছে যাবে। এই টাকা চলতি মাস থেকেই পড়ুয়াদের একাউন্টে ঢুকতে শুরু করবে। তবে এবার ট্যাব বা মোবাইল কেনার রসিদ জমা দিতে হবে।
অন্যদিকে, রাজ্যের কোষাগারের অবস্থা ভালো নয়। এইরকম পরিস্থিতিতে সমস্ত উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার্থীদের ১০ হাজার টাকা করে ট্যাব বা স্মার্টফোন কেনার জন্য টাকা দেওয়ার সরকারের সিদ্ধান্ত নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। বিধাননগর এলাকার স্কুলের এক প্রধান শিক্ষক বলেন, আমাদের স্কুলের ৭০% ছাত্র-ছাত্রীদের কাছে একাধিক স্মার্টফোন রয়েছে। ফলে তাদের আর স্মার্টফোনের কোনো প্রয়োজন নেই।
তারা অনলাইনে খুব সহজেই পড়াশোনা বা আনুষঙ্গিক সমস্ত কাজ করতে পারে। নিজস্ব ট্যাব বা একাধিক স্মার্টফোন থাকলে পড়ুয়াদের মধ্যে সোশ্যাল মিডিয়া কিংবা অনলাইন গেম এর প্রতি আসক্তি হতে পারে। অ্যাসিস্ট্যান্ট হেডমাস্টারসদের একটি সংগঠনের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, প্রত্যেকের হাতে আলাদাভাবে ট্যাব বা স্মার্টফোন না দিয়ে স্কুলের পরিকাঠামোর জন্য খরচ করলে ভালো হতো। সেক্ষেত্রে যদি স্কুলে কম্পিউটার দেওয়া যেত তাহলে সব ছাত্রছাত্রীদের কাজে লাগতো।
এই বিষয়ে পশ্চিমবঙ্গ সরকারি বিদ্যালয় শিক্ষক সংগঠনের পক্ষ থেকে জানানো হয়, যেখানে সরকারের কোষাগারের পরিস্থিতি ভালো নয়, সেখানে এরকম ভাবে টাকা দেওয়া ঠিক নয়। তবে অনেক শিক্ষকদের মতে, অনলাইনে পড়াশোনা করার জন্য ট্যাব বা স্মার্টফোনের প্রয়োজন রয়েছে। কিন্তু সেক্ষেত্রে শুধুমাত্র যে সমস্ত পড়ুয়ারা আর্থিকভাবে পিছিয়ে বা গরীব, তাদেরকেই এই সুবিধা দেওয়া যেতে পারত। আর অফলাইনে পড়াশোনা শুরু হওয়ায় ট্যাব বা স্মার্টফোনের সেরকম কোনো জরুরি প্রয়োজনীয়তা নেই।
২০২৩ সালে প্রায় ১০ লক্ষ পড়ুয়া উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা দেবেন। সমস্ত উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীদের ট্যাব বা স্মার্টফোন কেনার জন্য সরকারের তরফে ১০ হাজার টাকা করে দেওয়া নিয়ে যখন প্রশ্ন উঠেছে, তখন এই বিষয়ে শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু বলেন, এটা অনলাইন বা অফলাইন পড়াশোনার কথা বিবেচনা করে দেওয়া হচ্ছে না। রাজ্যের সমস্ত মেধাবী উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার্থীদের স্বীকৃতি স্বরূপ সরকারের তরফ থেকে এই ট্যাব বা স্মার্টফোন দেওয়া হচ্ছে।
তরুণের স্বপ্ন প্রকল্প গরিব এবং অনগ্রসর শ্রেণীর ছাত্র-ছাত্রীদের জন্যই। সেক্ষেত্রে আবার প্রশ্ন উঠেছে, তাহলে কি রাজ্যের ১০০ শতাংশ পড়ুয়াই মেধাবী? ১০০ শতাংশ ছাত্রছাত্রীরাই কি গরীব?
প্রসঙ্গত, সম্প্রতি কৃষ্ণনগরের একটি সভা থেকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীদের ১০ হাজার টাকা করে দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছিলেন।
অতিমারির পরিস্থিতির সময় থেকে যেহেতু অনলাইনে পড়াশোনার উপরে জোর দেওয়া হচ্ছিল, সেই কারণে রাজ্য সরকারের তরফে ১০ হাজার টাকা করে ট্যাব বা স্মার্টফোন কিনতে দেওয়ার জন্য সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। তবে সম্প্রতি সমস্ত জায়গাতেই প্রায় অফলাইনে পঠন-পাঠন শুরু হয়ে গিয়েছে। সামনে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা। তার আগে দ্বাদশ শ্রেণীর পড়ুয়াদের জন্য সরকারের তরফে ১০ হাজার টাকা করে দেওয়া হচ্ছে।
Written by Rajib Ghosh.