পশ্চিমবঙ্গের সমস্ত গ্রামীন স্বাস্থ্যকর্মী অঙ্গনওয়াড়ি ও আশা কর্মীদের বেতন বেড়েছে এর আগেই। আর এবার তাদের পরিষেবাকে আরও উন্নত এবং আধুনিক করতে এবার সমস্ত স্বাস্থ্যকর্মী অঙ্গনওয়াড়ি ও আশা কর্মীদের স্মার্টফোন দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিলো মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বাধীন পশ্চিমবঙ্গ সরকার। ২০২৫-২৬ অর্থবর্ষের বাজেটে আশা ও অঙ্গনওয়াড়ি কর্মীদের জন্য ২০০ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে, যার মাধ্যমে ৭০ হাজারের বেশি কর্মীকে স্মার্টফোন দেওয়া হবে। রাজ্যের অর্থ প্রতিমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য বাজেট ভাষণে (West Bengal Budget) এই ঘোষণা করেন।
স্বাস্থ্যকর্মী অঙ্গনওয়াড়ি ও আশা কর্মীদের স্মার্টফোন দেওয়া হবে
কেন এই সিদ্ধান্ত?
এই উদ্যোগের মূল লক্ষ্য হল গ্রামীণ স্বাস্থ্যকর্মীদের ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে সংযুক্ত করা, যাতে তারা সরকারি স্বাস্থ্য পরিষেবা সংক্রান্ত অ্যাপ সহজেই ব্যবহার করতে পারেন। রাজ্যের আশা কর্মী ও অঙ্গনওয়াড়ি কর্মীরা মূলত মা ও শিশুদের স্বাস্থ্যসেবা, টিকাকরণ, পুষ্টি পর্যবেক্ষণ, ডেঙ্গু-যক্ষ্মা-মধুমেহ রোগের নজরদারির মতো গুরুত্বপূর্ণ কাজ করে থাকেন। স্মার্টফোন পাওয়ার ফলে তারা এসব কাজ আরও দক্ষতার সঙ্গে করতে পারবেন।
স্বাস্থ্যকর্মীদের প্রতিক্রিয়া
রাজ্য সরকারের এই পদক্ষেপে খুশি আশা ও অঙ্গনওয়াড়ি কর্মীরা। হুগলির এক আশাকর্মী মিতা সাহা বলেন, “অনেক সময় মোবাইলের সমস্যার কারণে আমরা সরকারি অ্যাপে তথ্য আপলোড করতে পারি না। স্মার্টফোন পেলে আমাদের কাজের অনেক সুবিধা হবে।”
পাশাপাশি মালদার এক অঙ্গনওয়াড়ি কর্মী পিয়ালী দাস জানান, “একটি ভালো স্মার্টফোন থাকলে স্বাস্থ্য সংক্রান্ত যাবতীয় রিপোর্ট সঠিক সময়ে আপলোড করা সম্ভব হবে। অনেক সময় পুরনো ফোন হ্যাং করে যায়, যার ফলে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাঠানো সম্ভব হয় না।
রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া
এই ঘোষণার পর রাজ্যের বিরোধী দল বিজেপি সরকারের পদক্ষেপকে কটাক্ষ করেছে। বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার বলেন, “এই টাকা মূলত কেন্দ্রীয় সরকারের প্রকল্পের অন্তর্গত, রাজ্য সরকার এটাকে নিজেদের বলে প্রচার করছে।”
অন্যদিকে, বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী বলেন, “দেশের অন্যান্য রাজ্যে অনেক আগেই আশা কর্মীরা স্মার্টফোন পেয়েছেন, তাহলে পশ্চিমবঙ্গে এত দেরি হলো কেন?”
তবে তৃণমূল সরকারের যুক্তি, রাজ্যের স্বাস্থ্যব্যবস্থা আরও উন্নত করতেই এই প্রকল্প চালু করা হয়েছে, এবং এটি একেবারেই রাজ্যের নিজস্ব পরিকল্পনা।
স্মার্টফোন কবে থেকে দেওয়া হবে?
বাজেট অধিবেসন চলছে। আগামী ১ এপ্রিল থেকে শুরু হবে নতুন অর্থবর্ষ। আর এই বাজেট নতুন অর্থবর্ষের জন্য। তাই নতুন অর্থবর্ষ শুরু হওয়ার পরই স্মার্টফোন দেওয়া শুরু হবে।
নির্বাচনের আগে বড় পদক্ষেপ
২০২৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনকে সামনে রেখে এই প্রকল্পকে অনেকেই রাজনৈতিক কৌশল হিসেবে দেখছেন। এর মাধ্যমে গ্রামীণ এলাকার স্বাস্থ্যকর্মীদের সমর্থন আদায়ের চেষ্টা করছে রাজ্য সরকার। তবে রাজনৈতিক সমালোচনা যাই থাকুক, বাস্তবিক দিক থেকে এটি স্বাস্থ্যকর্মীদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
এই উদ্যোগ বাস্তবায়িত হলে রাজ্যের স্বাস্থ্যব্যবস্থা আরও শক্তিশালী হবে এবং মা ও শিশুর স্বাস্থ্যসেবা আরও সহজলভ্য হবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। এদিকে পরসিম্বঙ্গের সমস্ত রাজ্য সরকারি কর্মীদের ৪% মহার্ঘ ভাতা ঘোষণা হয়েছে এবারের বাজেটে। যার জেরে ১২০০ টাকা থেকে ৪০০০ টাকা পর্যন্ত বেতন বাড়ছে। ধীরে ধীরে সমস্ত বকেয়া DA মেটানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী।