বিভিন্ন রাজ্যের সরকারী কর্মী ও কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মীরা মূল বেতনের (Basic Pay) সাথে সাথে ডিএ (Dearness Allowance), বাড়িভাড়া ভাতা (House Rent Allowance), মেডিকেল ভাতা প্রভৃতি (Employee Benefits) পেয়ে থাকেন। আর প্রতি বছর DA ও ইনক্রিমেন্ট এবং একাধিক ভাতা বৃদ্ধিতে কর্মীদের বেতনবৃদ্ধি হয়। দাবী মতো যদি কর্মীরা বেতন না পান, তবে আন্দোলন, মামলা প্রভৃতি করে থাকেন সরকারি কর্মীরা। অপর দিকে অতিরিক্ত ভাতা বা ভুলক্রমে টাকা স্যালারি একাউন্টে ঢুকলে সেই টাকা ও ট্রেজারীতে ফেরত দিতে হয়। ঠিক তেমনিই একটি নজিরবিহীন রায় দিলো আদালত। আর আদালতের নির্দেশে সরাসরি কর্মীদের বাড়িতে চিঠিও পাঠানো হলো। ব্যাপারটা কি, বিস্তারিত জেনে নিন।
একাধিক সরকারি কর্মীদের বেতন ফেরতের নির্দেশ
বেতনভাতা নিয়ে আদালতের নির্দেশ, এতদিন পর্যন্ত যত ভাতা দেওয়া হয়েছে সেই সব মিটিয়ে দিতে হবে অবিলম্বে। না হলে দেওয়া হবে আইনি শাস্তি। এই মর্মে চিঠিও পাঠানো শুরু হয়ে গেছে সেই সব কর্মীদের বাড়িতে। অনেকেই সেই চিঠি পেয়ে এর বিরুদ্ধে মামলাও করেছেন সুপ্রিম কোর্টে (Supreme Court of India). কিন্তু কোন কাজই হয়নি। নিয়ম মত, রাজ্য সরকারি কর্মীদের সেই ভাতার (Govt Employees Allowance) টাকা ফেরত দিতেই হবে স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে, দেশের সর্বোচ্চ আদালত।
কত টাকা ফেরত দিতে হবে?
আদালতের নির্দেশে বলা হয়েছে, উল্লেখিত কর্মীরা বহু বছর ধরে অতিরিক্ত বেতন নিয়েছেন, সেই বেতন ট্রেজারীতে ফেরত দিতে হবে। আর সেই অতিরিক্ত বেতনের অংক জানলে চোখ কপালে উঠবে। তাদের কাজে জয়েন করার সময় থেকে শুরু করে এখনো পর্যন্ত মোট প্রায় ৪ লক্ষ টাকা ফেরত দিতে হবে। স্বাভাবিকভাবেই এই ঘটনা বেকায়দায় ফেলেছে সংশ্লিষ্ট কর্মীদের। কারণ একসঙ্গে এত টাকা জোগাড় করা সম্ভব কোনভাবেই সম্ভব নয়। কাদের বিরুদ্ধে এই শাস্তি? আপনিও কি রাজ্য সরকারের কর্মী? জেনে নিন।
আরও পড়ুন, LIC পলিসি থাকলেই, টাকা দিচ্ছে কোম্পানী। কিভাবে পাবেন ও কত টাকা পাবেন জেনে নিন।
কাদের টাকা ফেরত দিতে হবে?
শিক্ষক নিয়োগ মামলায় পশ্চিমবঙ্গের অবৈধ শিক্ষকদের বেতন ফেরত দিতে বলায় কার্যত তোলপাড় রাজ্য রাজনীতি। যদিও সেই নির্দেশ কে আপাতত অন্তর্বর্তীকালীন স্থগিতাদেশ দিয়েছে। ঠিক সেই সময়েই সম্প্রতি জম্মু কাশ্মীরের রাজ্য সরকারি কর্মীদের (Govt Employees) জন্য এমন অর্ডার জারি করেছে সংশ্লিষ্ট রাজ্য সরকার। ১৯৯২ সালের জম্মু কাশ্মীর সিভিল সার্ভিস অ্যাক্ট মাফিক যে নিয়ম চালু রয়েছে তা হল একই পরিবার থেকে দুই জন ব্যক্তি যদি রাজ্য সরকারের (Jammu & Kashmir Government) অধীনে কর্মরত হন সেক্ষেত্রে যেকোনো একজনকে HRA বা House Rent Allowance দেওয়া হবে।
সরকারি কর্মীর থেকে কেন টাকা চাওয়া হল?
আইনে আরও বলা আছে, যদি এই নিয়মে একই পরিবারের দুইজন HRA বাড়িভাড়া ভাতা নিয়ে থাকেন। তবে কিন্তু সেই নিয়মেই, হয় যেকোনো একজনের বাড়িভাড়া বাবদ পাওয়া প্রাপ্য টাকা ফেরত দিতে হবে নয়তো যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ভোগ করতে হবে এমনটা জানিয়েছে সরকার। আর তাতে সম্মতি দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। ঘটনাটি ঘটেছে সেখানকার এক প্রাক্তন ডিএসপির (DSP) ছেলের সঙ্গেও। রাজ্য পুলিশে দীর্ঘদিন ধরে কর্মরত ছিলেন ডিএসপি হিসেবে ওই ব্যক্তি। কিছু কাল আগে তার অবসর হয়েছে চাকরি থেকে। এখন তিনি রাজ্য সরকারের অধীনে পেনশনভোগী (Pensioneers). সেই সঙ্গে অন্যান্য Govt Employees এর মত প্রতি মাসে নির্দিষ্ট টাকা এইচআরএ হিসেবে পান।
এই দিকে সেই ব্যক্তির ছেলেও বর্তমানে রাজ্য সরকারের অধীনে এক সরকারি কর্মী (Govt Employees). ফলে তিনিও প্রতিমাসে বাড়ি ভাড়ার ভাতা (HRA Allowance) লাভ করেন। এই দিকে দুজনেই এক পরিবার থেকে হওয়ায় বিষয়টি নজরে আসে সরকারের। তারপরেই নিয়মের লংঘন করায় ওই প্রাক্তন ডিএসপির ছেলের কাছে পৌঁছায় চিঠি। যাতে বলা হয় চাকরিতে জয়েন করা থেকে শুরু করে এখনো পর্যন্ত পাওয়া সমস্ত বাড়ি ভাড়া ভাতা অবিলম্বে ফেরত দিতে হবে! যার হিসাব দেখানো হয়েছে ৩ লক্ষ ৯৬ হাজার ৮১৪ টাকা বা প্রায় ৪ লক্ষ টাকা।
এই নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের রায় কি?
এই দিকে সেই চিঠি পাওয়ার পর হতভম্ভ হয়ে পড়েছেন সেই ব্যক্তি। বিষয়টিকে রাজ্য সরকারের অন্যায় আচরণ বলে দাবি করে সুপ্রিম কোর্টেও আপিল করেন তিনি। কিন্তু কোর্ট স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে যে দোষ তারই। নিয়মমাফিক একই বাড়ি থেকে দুই জন রাজ্য সরকারি কর্মীর (Govt Employees HRA) পাওয়া অবৈধ। এবং প্রতিবছর নির্দিষ্ট ফরম্যাটে সেই হলফনামা দিতে হয়, যে একই পরিবারের একজনই বাড়িভাড়া ভাতা নিয়ে থাকেন। প্রসঙ্গত, পশ্চিমবঙ্গেও কিন্তু সেই নিয়ম চালু আছে। কিন্তু সেই নিয়ম না মেনে দেদার মাসের পর মাস বাড়ি ভাড়ার ভাতা নিয়ে অন্যায় করেছেন সেই ব্যক্তি। তাই শাস্তি স্বরূপ চাকরির শুরু থেকে প্রাপ্য বাড়িভাড়া বাবদ পাওয়া সমস্ত টাকা অবশ্যই ফেরত দিতে হবে তাকে, নয়তো ভোগ করতে হবে আইনি সাজা।
ভোট মিটলেই ফের ডিএ দেবে, রাজ্যের কর্মীদের সুখবর দিলেন, সুপ্রিমো।
কে বলতে পারে, ভবিষ্যতে আমাদের রাজ্য হয়ত সরকার একইভাবে নোটিশ পাঠানো হবে রাজ্য সরকারি কর্মীদের (Govt Employees) বাড়িতে! কারন প্রতিবছর মার্চ মাসে পশ্চিমবঙ্গের রাজ্য সরকারী কর্মীদেরও HRA Declaration দিতে হয়। তাই এই নিয়ম না মানলে, হয়তো তাদেরও এই নিয়ম অনুযায়ী শাস্তির বিধান আসতে পারে। কল্পনা হলেও ব্যাপারটা কিন্তু একেবারে অসম্ভব নয়। তাই প্রতিবেদনটি দেখে এখন থেকেই সাবধান হয়ে যাওয়া ভালো। যদিও এই খবরটি জম্মু কাশ্মীর রাজ্যের সরকারি কর্মীদের (Govt Employees) জন্য। তবে সুপ্রীম কোর্টের নিয়ম কিন্তু সবার ক্ষেত্রে একই। এই বিষয়ে কোনও প্রশ্ন বা মতামত থাকলে নিচে কমেন্ট করুন। নিয়মিত খবর পেতে EK24 News ফলো করুন।
Written by Nabadip Saha.