স্কুল আছে, শিক্ষকরা আসছেন যাচ্ছেন, অথচ পড়ুয়া নেই (School Closed). আবার অনেক স্কুলে প্রচুর পরিমাণে ছাত্রছাত্রী রয়েছে, শিক্ষকের এতটাই অভাব, সঠিকভাবে সমস্ত ক্লাস নেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। এই ছবিটা রাজ্যজুড়ে বহু স্কুলে দেখা যাচ্ছে। আর সেই কারণেই রাজ্য সরকার এবার শিক্ষকদের বদলি নীতিতে সিদ্ধান্ত নিতে চলেছে।
কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি বিশ্বজিৎ বসু বেশ কিছুদিন আগেই শিক্ষক বদলি সংক্রান্ত মামলায় রাজ্যের শিক্ষক-শিক্ষিকাদের বদলির নীতিতে পরিবর্তনের কথা বলেন। সমস্ত শিক্ষক শিক্ষিকারাই গ্রাম ছেড়ে শহরের স্কুলে বদলি হতে চাইছেন। এই বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন বিচারপতি। তার প্রশ্ন ছিল, তাহলে গ্রামের স্কুল গুলির কি অবস্থা হবে? সেখানকার পড়ুয়ারা পড়াশোনা করবে কি করে? এরপরেই রাজ্য সরকারের তরফে শিক্ষকদের বদলি নীতিতে (Teacher Transfer Rules) গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।
School Closed due to lack of student:
শুধু তাই নয়, যে সমস্ত স্কুলে পড়ুয়া একেবারেই প্রায় নেই বললেই চলে, অথচ শিক্ষক-শিক্ষিকা রয়েছেন, সেই সমস্ত স্কুলগুলি বন্ধ (School Closed) করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। আর সেই সমস্ত স্কুলের শিক্ষকদের সারপ্লাস ট্রান্সফার করে অন্য স্কুলে পাঠানোর প্রক্রিয়া শুরু হবে। যে সমস্ত স্কুলগুলিতে প্রচুর পরিমাণে ছাত্রছাত্রী রয়েছে, অথচ শিক্ষক শিক্ষিকার অভাব, সেই সমস্ত স্কুলে পড়ুয়াহীন স্কুলগুলি থেকে শিক্ষক-শিক্ষিকাদের বদলি করে নিয়ে এসে সেখানে চাকরিতে পাঠানো হবে।
প্রাইমারি, আপার প্রাইমারি, মাধ্যমিক এবং উচ্চ মাধ্যমিক স্তরের এরকম ৮২০৭ টি স্কুলকে চিহ্নিত করেছে রাজ্য সরকার। যে স্কুলগুলি বন্ধ করার জন্য সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে (Govt Decided School Closed Due to Lack of Students) এই সমস্ত স্কুলের শিক্ষক শিক্ষিকারা প্রচুর পরিমাণে থাকলেও পড়ুয়ারা সেই অর্থে একেবারে নেই বললেই চলে। রাজ্যের এই ৮২০৭ স্কুলের মধ্যে শুধুমাত্র কলকাতাতেই রয়েছে ৫৩১ টি স্কুল।
আর সরকারের এই সিদ্ধান্তের কথা জানতে পেরেই শাসক বিরোধী শিক্ষক সংগঠনের বক্তব্য, রাজ্য সরকার শিক্ষা ব্যবস্থাকে বেসরকারীকরণ করতে চাইছে। জেলবন্দী প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের আমলে রাজ্যে শিক্ষক শিক্ষিকাদের বদলির জন্য উৎসশ্রী পোর্টাল (Utsashree Portal) চালু করা হয়। এই পোর্টালে একাধিকবার অভিযোগ উঠেছে, মোটা টাকার বিনিময়ে গ্রাম থেকে শিক্ষক শিক্ষিকাদের শহরের স্কুলে বদলি করা হয়েছে। ফলে এখন উৎসশ্রী পোর্টালে বদলি বন্ধ রয়েছে।
বর্তমানে রাজ্য জুড়ে ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলের রমরমা। ব্যাঙের ছাতার মত গ্রামে গঞ্জে অলিতে গলিতে গজিয়ে উঠছে ইংরেজি মাধ্যমের স্কুল। আর এর ফলে সরকারি স্কুল এবং বাংলা মাধ্যমের স্কুলগুলির দুরবস্থা (School Closed) দেখা যাচ্ছে। শাসক বিরোধী শিক্ষক সংগঠনের অভিযোগ, সরকারের সদিচ্ছা এবং নজরদারির অভাবেই সরকারি স্কুলগুলির এই পরিস্থিতি। তবে এবার রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে কড়া পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।
এর আগে বহুবার লক্ষ্য করা গেছে, শিক্ষকের চাকরি পাওয়ার কিছু দিনের মধ্যেই গ্রামাঞ্চলে যে শিক্ষক বদলি হয়েছেন পড়ুয়াদের শিক্ষাদান করার জন্য, তিনি তার নিজের সুবিধার কথা ভেবে গ্রামের স্কুল ছেড়ে দিয়ে শহরের স্কুলে বদলি হয়ে চলে আসছেন। আর শহরের যে স্কুলে বদলি হচ্ছেন, সেই স্কুলে দেখা যাচ্ছে, হয়তো ছাত্র-ছাত্রীর সংখ্যা প্রায় নেই। এরকম বহু স্কুল আছে,যেখানে শিক্ষক আছে তো পড়ুয়া নেই, আবার পড়ুয়া আছে প্রচুর, কিন্তু শিক্ষকের অভাব।
রাজ্যের স্কুলে মিড ডে মিল দেখতে আবার কেন্দ্রের দল, ঝামেলা এড়াতে কি কি রেডি রাখবেন।
আর এই পরিস্থিতির সমাধানের জন্যই রাজ্য সরকার পড়ুয়াহীন ফাকা স্কুলগুলি বন্ধ (School Closed) করে দেওয়ার জন্য সিদ্ধান্ত নিতে চলেছে। আর সেখানকার শিক্ষক শিক্ষিকাদের গ্রাম থেকে শহর যে সমস্ত স্কুলে পড়ুয়া রয়েছে প্রচুর, Surplus Transfer করে সেই স্কুলে বদলি করা হবে। আর এর ফলে ছাত্র শিক্ষক অনুপাতের (PTR Ratio) যে বৈষম্য দেখা যাচ্ছে, সেটিকে দূর করার চেষ্টা করা হচ্ছে।
Written by Rajib Ghosh.