ভারত সরকারের ৯টি ছোট ছোট সঞ্চয় প্রকল্পের মধ্যে একটি হল, পোস্ট অফিসের রেকারিং ডিপোজিট স্কীম (Post Office Recurring Deposit Scheme)। যারা সবে কেরিয়ার শুরু করেছেন এবং একটু একটু করে জমিয়ে ভবিষ্যৎ গড়তে চান তাদের জন্য Post Office Recurring Deposit বা পোষ্ট অফিসের মাসিক রেকারিং প্রকল্প সবচেয়ে ভালো। কেন এই স্কীম ভালো, এতো স্কীম থাকতে কেন এই প্রকল্পে বিনিয়োগ করবেন, নিয়ম কি আছে সমস্ত নিয়ে রইলো বিস্তারিত বিবরণ।
এই স্কীম কেন করবেন? (Post Office Recurring Deposit)
১) সরকারী প্রকল্প, তাই টাকা মার যাওয়ার ভয় নেই।
২) ব্যাঙ্ক এর চেয়ে সুদ বেশি পাবেন। ফলে ভালো রিটার্ন আসতে বাধ্য।
৩) আয় বুঝে সঞ্চয় করতে পারবেন, মানে ১০০ টাকা থেকেও শুরু করা যায়। ঊর্ধ্বসীমা নেই।
৪) আপনি চাইলে বাড়িতে বসেও পোস্টাল এজেন্টের মাধ্যমে রেকারীং প্রিমিয়াম দিতে পারবেন, তারজন্য অতিরিক্ত কোনও টাকা লাগবে না। এবার প্রশ্ন হচ্ছে, কিভাবে শুরু করবেন?
কিভাবে শুরু করবেন? (Post Office Recurring Deposit)
১৮ বছরের বেশি বয়সের ভারতীয় নাগরিকরা একক ভাবে অথবা জয়েন্ট একাউন্ট খুলতে পারবেন। তবে ১০ বছরের ঊর্ধ্বের নাবালক এবং নাবালিকারা তাদের অভিভাবকের সঙ্গে যৌথ ভাবে অ্যাকাউন্ট খুলতে পারবেন। পোস্ট অফিসের রেকারিং ডিপোজিট স্কিম ৫ বছরের জন্য করতে হয়। এখানেই ব্যাঙ্কের সঙ্গে ফারাক তৈরি হয় পোস্ট অফিসের। ব্যাঙ্কের ক্ষেত্রে ৬ মাস, ১ বছর এবং ৩ বছরের জন্য এই রেকারিং ডিপোজিট করতে পারেন গ্রাহক। কিন্তু পোস্ট অফিসের ন্যূনতম মেয়াদ কাল (Tenure) ৫ বছর। সেক্ষেত্রে এই ৫ বছরে সুদ কমলেও আপনার প্লানের সুদ কমবে না। তবে পাঁচ বছরের পরেও আবার পাঁচ বছরের হিসেবে রেকারিং ডিপোজিট স্কিমের অ্যাকাউন্টটি চালানোর সুবিধা মেলে। সুদও পাওয়া যায় আগের নিয়মেই। এই সুদের হার পয়লা জানুয়ারি ২০২১ থেকে লাগু করা হয়েছে৷ যা ব্যাঙ্কের থেকে বেশি।
সুদের হার ও বিবরনঃ
এই প্রকল্পটি (Post Office Recurring Deposit) মধ্য মেয়াদী বিনিয়োগের মধ্যে পড়ে। যার মধ্যে বিনিয়োগকারীদের তাঁদের আমানত কমপক্ষে ৫ বছরের জন্য সক্রিয় রাখতে হবে। এতে গ্রাহক প্রতি মাসে ন্যূনতম ১০০ টাকা জমা দিয়ে ভাল পরিমাণ অর্থ সুদ সহ ফেরত পেতে পারেন এবং এতে গ্রাহকের অর্থও নিরাপদ থাকবে।এই স্কিমে আমানতকারীর জমানো অর্থের উপর বার্ষিক সুদ অনুযায়ী প্রতি তিন মাসে সুদের হিসেব করা হয়। এর পর প্রত্যেক তিন মাসে গ্রাহকের অ্যাকাউন্টে কম্পাউন্ড ইন্টারেস্টে যোগ করা হয়৷ পোস্ট অফিসে বর্তমানে চক্রবৃদ্ধি হারে ৫.৮ শতাংশ হিসেবে সুদ দেওয়া হচ্ছে ৷ প্রতি তিন মাস অন্তর কেন্দ্রীয় সরকার স্মল সেভিংস স্কিমে সুদের হার ঘোষণা করে।
আরও পড়ুন, দিনে মাত্র দুই টাকা জমিয়ে পান লাখ টাকা
কত বিনিয়োগ করলে কত রিটার্ন পাবেন?
ধরা যাক, কোনও বিনিয়োগকারী ১০ বছরের জন্য পোস্ট অফিসে রেকারিং ডিপোজিট স্কিম (Post Office Recurring Deposit) করেছেন। যেখানে তিনি প্রতি মাসে ১০ হাজার টাকা করে জমা রাখছেন। সেক্ষেত্রে বার্ষিক ৫.৮ শতাংশ সুদের হার হিসেবে ১০ বছর পরে তিনি প্রায় ১৬ লক্ষ টাকা পাবেন। সুদের হার একই থাকলে ওই বিনিয়োগকারীর ১৬,২৮,৯৬৩ টাকা পাওয়ার কথা। এই কারনেই এটি এখনও পর্যন্ত পোস্ট অফিসের সব চেয়ে জনপ্রিয় রেকারিং ডিপোজিট স্কিম। আর প্রতিমাসে ১ হাজার টাকা রাখলে পাবেন ১৬২৮৯৬ টাকা।
কিভাবে প্রিমিয়াম দেবেনঃ
নগদ বা চেকের বিনিময়ে একটি পোস্ট অফিসে আরডি অ্যাকাউন্ট খোলা যেতে পারে। অ্যাকাউন্টটি যদি মাসের ১৫ তারিখের মধ্যে খোলা হয়, তা হলে পরবর্তী বিনিয়োগ পরের মাসের ১৫ তারিখের আগে জমা করতে হবে। আবার অ্যাকাউন্টটি মাসের ১৬ তারিখের পরে খোলা হলে পরবর্তী মাসের শেষ কাজের দিন পর্যন্ত জমা দেওয়া যেতে পারে।
বিশেষ সতর্কতাঃ
তবে কোনও মাসে টাকা জমা দিতে না পারলে জরিমানা দিতে হবে। প্রতি মাসে ১ শতাংশ জরিমানা দিতে হয়৷ ৪ মাস পরপর টাকা জমা না-করলে গ্রাহকের অ্যাকাউন্টটি বন্ধ হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তবে চিন্তার কিছু নেই। অ্যাকাউন্ট বন্ধ হয়ে গেলেও কিস্তি এবং জরিমানার টাকা দিয়ে পরবর্তী দু’মাসের মধ্যে ফের চালু করা যাবে রেকারিং ডিপোজিট অ্যাকাউন্ট৷ স্কিমের সুবিধেও মিলবে।
আরও পড়ুন, এককালীন ৫০হাজার টাকা দিয়ে পান দশ লাখ টাকা
ইনকাম ট্যাক্সঃ
গ্রাহকের জমানো অর্থের পরিমাণ যদি ৪০,০০০ টাকা ছাড়িয়ে যায়, তা হলে টিডিএস দিতে হবে আমানতকারীকে। প্রতি বছর কর বাবদ ১০ শতাংশ কেটে নেবে সরকার। রেকারিং ডিপোজিট থেকে পাওয়া সুদের উপর থেকেই এই কর নেয় সরকার। তবে মেয়াদ শেষে পাওয়া অর্থ আয়করের আওতায় পড়ে না। বিনিয়োগকারীর আয় করযোগ্য না-হলে তাঁরা টিডিএস ফেরত পাওয়ার জন্য আবেদন করতে পারেন। সেই ক্ষেত্রে ফিক্সড ডিপোজিটের মতোই ফর্ম 15G ফাইল করতে হয় তাঁদের। প্রবীণ নাগরিক হলে তাঁকে 15H ফর্ম পূরণ করতে হবে।