আরজি করের নৃশংস ধর্ষ’ণ হ’ত্যা মামলার প্রতিবাদে ‘পশ্চিমবঙ্গ ছাত্র সমাজ’ নবান্ন অভিযান (Nabanna Abhijan) তথা নবান্ন ঘেরাওয়ের ডাক দিয়েছে। কলকাতার সড়ক পথে নেমে সরাসরি বিক্ষোভ প্রদর্শন করবেন তারা। আন্দোলনের দাবি একটাই, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের (Manata Banerjee) পদত্যাগ। কিছু বিশ্লেষক এটির সফলতা নিয়ে সন্দিহান, অন্যরা এতে বড় ধরনের অশান্তির আশঙ্কা করছেন। যদিও এ কথা ঠিকই যে ছাত্র সমাজের মধ্যে এই নিয়ে উত্তেজনা ক্রমে বৃদ্ধি পাচ্ছে। এদিকে গতকাল রাজ্যের পুলিশ কর্তা (ADG South Bengal) গতকাল জানিয়েছেন পশ্চিমবঙ্গ ছত্র সমাজ নামে কোনও সংগঠনের নাম কোথাও নেই!
আর তাই প্রতিকূল পরিস্থিতির কথা চিন্তা করে ইতিমধ্যেই ট্রাফিক চলাচলে একাধিক বিধি নিষেধ আরোপ করে দিয়েছে রাজ্য সরকার। কিছু কিছু রুটে যানবাহন চলাচল নিষিদ্ধ থাকবে। এমনকি সব ধরনের যানবাহন ও চালু থাকবে না সেদিন। এ প্রসঙ্গে ছাত্র সমাজের প্রতিক্রিয়া কি? তার জন্য কতটা প্রভাব পড়বে রাজ্যের সাধারণ জনজীবনের ওপর? সেটাই আজকের আলোচ্য বিষয়।
Nabanna Abhijan date and time
নবান্ন অভিযানের দিন নতুন ট্রাফিক নিয়মঃ
আজ অর্থাৎ ২৭ আগস্ট দুপুর ১টা থেকে Nabanna Abhijan এর ডাক দেওয়া হয়েছে। যার জেরে আগে থেকেই সতর্ক প্রশাসন। যার জেরে বিভিন্ন রুটে ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে। ‘নবান্ন অভিযান’ উপলক্ষে কলকাতা পুলিশ শহরের বিভিন্ন রাস্তায় যানবাহন চলাচল নিয়ে কিছু কঠোর বিধিনিষেধ জারি করেছে। মঙ্গলবার ভোর ৪ টে থেকে রাত ১০ টা পর্যন্ত বেশ কিছু রাস্তা পণ্যবাহী গাড়ির জন্য বন্ধ থাকবে। পণ্যবাহী গাড়ি যেগুলি জরুরি সরবরাহ যেমন এলপিজি গ্যাস সিলিন্ডার, অক্সিজেন, দুধ, ওষুধ, আনাজপাতি এবং ফলস্বরূপ পচনশীল জিনিসপত্র বহন করবে, সেগুলি এই নিষেধাজ্ঞার আওতায় পড়বে না। তবে, অন্যান্য পণ্যবাহী গাড়ির চলাচল বন্ধ থাকবে।
Nabanna Abhijan Route
দক্ষিণ শহরতলির প্রধান রাস্তাগুলিতে বিধিনিষেধের তালিকা:
১. বিদ্যাসাগর সেতু ও র্যাম্প
২. খিদিরপুর রোড
৩. তারাতলা রোড
৪. ডায়মন্ড হারবার রোড
৫. সার্কুলার গার্ডেনরিচ রোড
৬. গার্ডেনরিচ রোড
৭. হাইড রোড
৮. কোল বার্থ রোড
৯. রিমাউন্ট রোড
১০. কলকাতা ডক এবং কলকাতা বন্দরের সংযোগকারী ফিডার রোড
মধ্য কলকাতা-সংলগ্ন রাস্তার বিধিনিষেধঃ
১. জওহরলাল নেহরু রোড
২. রানি রাসমণি অ্যাভিনিউ
৩. রেড রোড
৪. নিউ রোড
৫. ডাফরিন রোড
৬. মেয়ো রোড
৭. আউটরাম রোড
৮. খিদিরপুর রোড
৯. হসপিটাল রোড
১০. লাভার্স লেন
১১. কুইন্সওয়ে
১২. ক্যাসুরিনা অ্যাভিনিউ
১৩. ক্যাথিড্রাল রোড
১৪. এজেসি বসু রোড
১৫. এসএন ব্যানার্জি রোড
১৬. ওল্ড কোর্ট হাউস স্ট্রিট
১৭. কাউন্সিল হাউস স্ট্রিট
১৮. কিংসওয়ে
১৯. সেন্ট জর্জেস গেট রোড
২০. স্ট্র্যান্ড রোড
২১. কালীকৃষ্ণ ঠাকুর স্ট্রিট
২২. কালাকার স্ট্রিট
২৩. ব্রেবোর্ন রোড
২৪. হাওড়া ব্রিজ
নবান্ন অভিযানের দিন বিভিন্ন রাস্তায় যানবাহন নিয়ন্ত্রণ করা হতে পারে, এবং পরিস্থিতি অনুযায়ী সড়কপথে পরিবর্তন আসতে পারে। ট্র্যাফিক পুলিশ কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, এই নিয়ন্ত্রণে রয়েছে অফিসারদের সিদ্ধান্তের ওপর ভিত্তি করে স্থানীয় পরিস্থিতির ওপর নির্ভরশীলতা। রাজ্য সরকার জানায়, এই দিনে জনজীবন স্বাভাবিক রাখতে প্রচুর সরকারি বাস, ফেরি সার্ভিস এবং ট্রাম পরিষেবা বৃদ্ধি করা হবে। বেসরকারি বাস, ট্যাক্সি, এবং অ্যাপ ক্যাবও যথেষ্ট পরিমাণে রাস্তায় থাকবে।
ছাত্র আন্দোলনে রাজ্য ও ছাত্র সমাজের অবস্থানঃ
মেডিকেল কলেজের ঘটনার প্রতিবাদে আন্দোলন যে ভয়ংকর রূপ নিতে পারে তা আগেই আন্দাজ করেছিল সরকার। সেই কারণেই রাজ্য পুলিশ জানিয়ে দিয়েছে যে, অভিযানটি বেআইনি, এবং এটি অন্য কোনো দিনে অথবা অন্য কোনো স্থানে আয়োজন করলে অনুমতি দেওয়া হতে পারে। রাজ্য সরকারও নবান্ন অভিযানের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে আবেদন করেছে, কিন্তু হাইকোর্ট সেই আবেদন খারিজ করে দিয়েছে। তবে আরজি কর মেডিকেল কলেজের ছাত্র ও জুনিয়র ডাক্তারেরা জানাচ্ছেন যারা এই আন্দোলনের ডাক দিয়েছেন, সেই সংগঠনের সাথে তাদের কোনও সম্পর্ক নেই। অন্যদিকে বিজেপি সভাপতি সুকান্ত মজুমদার জানিয়েছেন, বিজেপি এই অভিযানের উদ্যোক্তা নয়। তবে সুবিচারের পক্ষে তাদের সমর্থন থাকবে।
আরও পড়ুন, পশ্চিমবঙ্গের মহিলাদের লক্ষ্মীর ভান্ডার প্রকল্পের সব টাকা ফেরত দিতে হবে?
পশ্চিমবঙ্গ ছাত্র সমাজ, যারা এই আন্দোলনের আয়োজন করেছে, তারা শান্তিপূর্ণ মিছিলে অংশগ্রহণের আহ্বান জানিয়েছে এবং রাজনৈতিক পতাকা বহন না করার অনুরোধ করেছে। উদ্যোক্তারা জানিয়েছে, মুখ্য়মন্ত্রীর পদত্যাগের দাবি তোলা যাবে মিছিলে। উই ওয়ান্ট জাস্টিস স্লোগান তোলা যাবে। এর বাইরে কোনও রাজনৈতিক স্লোগান তোলা যাবে না। তার এও নিশ্চিত করেছে যে, তাদের আন্দোলন শান্তিপূর্ণ হবে এবং পুলিশের দ্বারা আটকানো হলে ভাঙচুর করা হবে না। এই পরিস্থিতি মোকাবেলার জন্য সরকারের পক্ষ থেকে কড়া ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে, তবে সাধারণ মানুষের অসুবিধা কমানোর জন্য পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
Written by Nabadip Saha.