সারা ভারতে কি তবে কার্যত শুরু হয়ে গেল নাগরিকপঞ্জি বা NRC এর পূর্বপ্রস্তুতি? আধার কার্ডের বদলে Citizen Card বা নাগরিকত্ব কার্ড দিচ্ছে মোদী সরকার। কি এই সিটিজেন কার্ড? কারা এই কার্ড পাবেন? সিটিজেন কার্ডের সুবিধা কি? কিভাবে আবেদন করবেন, বিস্তারিত জেনে নিন।
Indian Citizen Card Benefits and Eligibility
আধার বা ভোটার কার্ড এরপর অতীত, আসছে নতুন সিটিজেনশিপ কার্ড। আধার বা ভোটার কার্ড এরপর অতীত। তার বদলে কেন্দ্রীয় সরকার চালু করতে চলেছে নতুন এই কার্ড। সাধারণত এখন দেশের মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে আধার কার্ড। তবে আধার কেবল পরিচয়পত্রের প্রমাণ, নাগরিকত্বের নয়। নাগরিকত্বের জন্য রয়েছে ভোটার কার্ড। কিন্তু এই Citizen Card এমন এক নথি যা একদিকে পরিচয় এবং অন্যদিকে নাগরিকত্ব দুইই বহন করে। তাই এর গুরুত্ব আরো বেশি। যাই হোক, আর কথা না বাড়িয়ে জেনে নিন, কবে থেকে চালু হচ্ছে এই কার্ড, এর গুরুত্ব কী, এবং কীভাবে এটি করাবেন।
সিটিজেন কার্ডের মূল উদ্দেশ্য
এই প্রস্তাব অনুযায়ী, বৈধ ভারতীয় নাগরিকদের জন্য একটি ইউনিক সিটিজেন কার্ড ইস্যু করার ভাবনা রয়েছে। কার্ডটিতে থাকবে একটি বিশেষ ইউনিক নম্বর, যা নাগরিকদের পরিচয় এবং নাগরিকত্বের গুরুত্বপূর্ণ প্রমাণ হবে। যদি এই পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হয়, তবে ভোটার কার্ড, প্যান কার্ড এবং আধার কার্ডের পর সিটিজেন কার্ড হবে ভারতের চতুর্থ প্রধান পরিচয়পত্র।
সরকারি সূত্র অনুযায়ী, ভোটার কার্ড বা আধার কার্ডকে পুরোপুরি নাগরিকত্বের প্রমাণ হিসেবে গণ্য করা যায় না। তাই আলাদা একটি নাগরিকত্ব কার্ড তৈরির প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছে। মূলত জাতীয় নিরাপত্তা জোরদার করা এবং অবৈধ নাগরিকদের সনাক্ত করার জন্য এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ২০১৯ সালে অসমে এনআরসি (NRC) চালু করার সময় প্রথমবার এই ধারণা নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছিল। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক মনে করে, বৈধ এবং অবৈধ নাগরিকদের মধ্যে পরিষ্কার পার্থক্য তৈরির জন্য একটি ইউনিক নাগরিকত্ব কার্ড অপরিহার্য।
সিটিজেন কার্ডের গুরুত্ব
সিটিজেন কার্ড চালু হলে এটি হবে আধার, ভোটার এবং প্যান কার্ডের মতো একটি গুরুত্বপূর্ণ নথি। তবে এটি শুধু পরিচয়ের নয়, নাগরিকত্বেরও একক প্রমাণ হিসেবে কাজ করবে।
- জাতীয় নিরাপত্তা জোরদার করা: বৈধ ও অবৈধ নাগরিকদের মধ্যে পরিষ্কার পার্থক্য করতে সাহায্য করবে।
- নাগরিকত্ব সংক্রান্ত জটিলতা মেটানো: নাগরিকত্ব নিয়ে চলমান বিতর্ক এবং সমস্যা সমাধানে এটি সহায়ক হবে।
- প্রশাসনিক কার্যকারিতা বৃদ্ধি: নাগরিকদের সঠিক তথ্য সংরক্ষণ এবং ব্যবহার করা সহজ হবে।
সিটিজেন কার্ড কীভাবে করাবেন?
সিটিজেনশিপ কার্ড পেতে হলে আপনাকে জাতীয় জনসংখ্যা পঞ্জি (NPR) আপডেটের সময় তথ্য জমা দিতে হবে। এই কার্ড ইস্যু করার জন্য এনপিআরের ভিত্তিতে বৈধ নাগরিকদের একটি ইউনিক নম্বর দেওয়া হবে।
১) তথ্য জমা: সেন্সাস এবং এনপিআর প্রক্রিয়ার সময় নাগরিকদের ব্যক্তিগত এবং পারিবারিক তথ্য আপডেট করতে হবে।
২) ইস্যু প্রক্রিয়া: তথ্য যাচাইয়ের পর সরকার সিটিজেন কার্ড ইস্যু করবে।
৩) ডিজিটাল এবং ফিজিক্যাল ফরম্যাট: কার্ডটি ডিজিটাল এবং ফিজিক্যাল উভয় ফরম্যাটে পাওয়া যাবে।
কবে থেকে চালু হচ্ছে এই কার্ড?
২০২৪ সালের কেন্দ্রীয় বাজেট ঘোষণার পরই শুরু হবে ভারতের পরবর্তী জনগণনার কাজ। তার সঙ্গে চলবে জাতীয় জনসংখ্যা পঞ্জি (NPR) আপডেট করার প্রক্রিয়া। এই প্রক্রিয়ার সময়ই কেন্দ্রীয় সরকার Citizenship Card চালুর উদ্যোগ নিতে পারে। যদিও চূড়ান্ত তারিখ এখনো ঘোষণা করা হয়নি, তবে ধারণা করা হচ্ছে, ২০২৪ সালের মধ্যেই এটি কার্যকর হতে পারে।
আধার এবং ভোটার কার্ডের ভূমিকা কী থাকবে?
এই কার্ড চালু হলেও আধার এবং ভোটার কার্ড একেবারে অপ্রাসঙ্গিক হয়ে যাবে না। এগুলি বিশেষ উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত হবে, যেমন ভোট দেওয়া এবং বিভিন্ন পরিষেবা গ্রহণ। তবে নাগরিকত্বের একক প্রমাণ হিসেবে নাগরিক কার্ডই প্রধান ভূমিকা পালন করবে।
আরও পড়ুন, জানুয়ারি থেকে বদলে যাচ্ছে এটিএম থেকে টাকা তোলার সীমা। সর্বোচ্চ কত টাকা তুলতে পারবেন? দেখে নিন
সরকারের পরবর্তী পদক্ষেপ
নাগরিক কার্ড ছাড়াও কেন্দ্র আরও কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প নিয়ে আসছে। এর মধ্যে রয়েছে —
- ওয়ান নেশন ওয়ান ইলেকশন
- অভিন্ন দেওয়ানি বিধি (ইউসিসি)
- ডিলিমিটেশন (আসন পুনর্বিন্যাস)
সুতরাং মোদী সরকার ৩.০ আমলে এই ৪টি পরিবর্তন দেশ জুড়ে আসতে চলেছে। আর আবার বিতর্ক হবে, সংসদ উত্তাল হবে। এর ভবিষ্যৎ কি হয়, সেই বিষয়ে নজর থাকবে দেশবাসীর। পরবর্তী আপডেট পেতে EK24 News ফলো করুন।
Written by Nabadip Saha.