জাতিগত শংসাপত্র তথা Caste Certificate নিয়ে কোলকাতা হাইকোর্টের ঐতিহাসিক রায়! তৃণমূল জমানার পাঁচ লক্ষ OBC Certificate বাতিল ঘোষণা! তবে কি চাকরিতে আর সংরক্ষণ পাবেন না অনগ্রসররা? আর যারা ইতিমধ্যেই সংরক্ষণ নিয়ে চাকরি পেয়েছেন বা অন্য সুবিধা পেয়েছেন, সেই ক্ষেত্রে কি হবে? এবং কাদের সংরক্ষণ বাতিল হয়েছে, এই ব্যাপারে রাজ্য সরকার কি জানিয়েছে, বিস্তারিত জেনে নিন।
Calcutta High Court Judgement on OBC Certificate Cancelled
অনগ্রসর শ্রেণীভুক্তদের সুবিধার্থে রাজ্য সরকার আগেই চালু করেছিল ওবিসি সার্টিফিকেট (OBC Certificate)। অন্যান্য অনগ্রসদের সংরক্ষণ স্বার্থে সরকারি তরফে যে শংসাপত্র দেওয়া হয় তাকেই বলে ওবিসি সার্টিফিকেট (OBC Certificate)। এই সার্টিফিকেটের মূল্য অপরিসীম। অনগ্রসররা পান বিশেষ সুযোগ সুবিধা। চাকরি ও অন্যান্য ক্ষেত্রে সংরক্ষণ পান তাঁরা। আর এবার সেই ওবিসি সার্টিফিকেট (OBC Certificate) নিয়েই বড়সড় সিদ্ধান্ত জানালো কলকাতা হাইকোর্ট। বাতিল করা হলো পাঁচ লক্ষ ওবিসি সার্টিফিকেট।
বিশেষ করে তৃণমূল শাসনকালে যে সমস্ত ওবিসি সার্টিফিকেট (OBC Certificate) ইস্যু হয়েছিল সেই সমস্ত সার্টিফিকেট সরাসরি বাতিল করা হয়েছে। এদিন এমনই একটি ঐতিহাসিক সিদ্ধান্ত জানিয়েছে উচ্চ আদালত (Calcutta High Court).
কেন বাতিল হল পাঁচ লক্ষ ওবিসি সার্টিফিকেট?
Why 5 lakh OBC certificates were cancelled?
এদিন বুধবার কলকাতা হাইকোর্টের তরফে বিপুল সংখ্যক ওবিসি সার্টিফিকেট বাতিল হল। কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি তপোব্রত চক্রবর্তী এবং বিচারপতি রাজাশেখর মান্থা প্রায় পাঁচ লক্ষ ওবিসি সার্টিফিকেট বাতিলের রায় দিয়েছেন। হাইকোর্টের রায়ের পরে স্বাভাবিক ভাবেই প্রশ্ন উঠছে, কেন হঠাৎ করে এত সংখ্যাক ওবিসি সার্টিফিকেট (OBC Certificate) বাতিল করল উচ্চ আদালত? সংশ্লিষ্ট বিষয়ে হাইকোর্টের তরফে বিবৃতি দেওয়া হয়েছে।
এ বিষয়ে হাইকোর্টের পর্যবেক্ষণ, ২০১০ সালের পর থেকে জারি হওয়া ওবিসি সার্টিফিকেট গুলি (OBC Certificate) সঠিক আইন মেনে বানানো হয়নি। তাই ২০১০ সালের পর যে সমস্ত ওবিসি সার্টিফিকেট ইস্যু হয়েছে, সেগুলি সরাসরি বাতিল করে দিয়েছে উচ্চ আদালত। যার মধ্যে নাম উঠেছে পাচ লক্ষ প্রার্থীর সার্টিফিকেটের।
5 Lakh OBC Caste Certificate was Cancelled by Calcutta High Court
৫ লক্ষ ওবিসি সার্টিফিকেট বাতিল
কলকাতা হাইকোর্টের তরফে এই রায়ের পরে চারিদিকে শোরগোল পড়ে গেছে। এদিন হাইকোর্ট ২০১২ সালের মামলার রায় ঘোষণা করেছে। যে মামলায় মামলাকারীদের হয়ে আদালতে উপস্থিত থাকা আইনজীবীরা জানিয়েছেন, ২০১০ সালে একটি অন্তর্বর্তী রিপোর্টের ভিত্তিতে পশ্চিমবঙ্গে ‘অন্যান্য অনগ্রসর শ্রেণি’ তৈরি করে বামফ্রন্ট সরকার। এই শ্রেণীর নাম দেওয়া হয়েছিল ওবিসি- এ (OBC-A)। কিন্তু তার পরের বছর তথা ২০১১ সাল নাগাদ বাংলার মসনদে বসে তৃণমূল সরকার। ক্ষমতায় আসার পর তৃণমূল সরকার কোন চূড়ান্ত রিপোর্ট ছাড়াই একটি তালিকা নির্মাণ করেছিল ও এই বিষয়ে আইন প্রণয়ন করেছিল। ফলস্বরূপ তৃণমূল সরকারের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের হয় উচ্চ আদালতে। ২০১২ সালে দায়ের করা হয়েছিল এই মামলাটি।
আদালতে মামলাকারীদের দাবি ছিল, অবিলম্বে যেন এই আইন খারিজ করা হয়। তৃণমূল সরকার কর্তৃক জারি হওয়া আইনকে ১৯৯৩ সালের ওয়েস্ট বেঙ্গল ব্যাকওয়ার্ড ওয়েলফেয়ার কমিশন আইনের পরিপন্থী বলেও উল্লেখ করেছিলেন তাঁরা। এই আইনের ফলে সমাজের পিছিয়ে পড়া শ্রেণী সরকারি সুবিধা থেকে বঞ্চিত হবে বলে মন্তব্য ছিল মামলাকারীদের। সবদিক ভেবেচিন্তে তাই ওবিসি আইনকে বাতিল করার জন্য আবেদন করেছিলেন তাঁরা। মামলা দায়ের হওয়ার প্রায় এক যুগ পর ২০২৪ সালের ২২ মে মামলাকারীদের অভিযোগ তাৎপর্য পূর্ণ মনে করে তৃণমূল জামানায় জারি হওয়ার সমস্ত ওবিসি সার্টিফিকেট এক লহমায় বাতিল করে দিল কলকাতা হাইকোর্ট। সিদ্ধান্তের ফলে নিঃসন্দেহে চিন্তায় ওবিসি প্রার্থীরা।
আরও পড়ুন, ১৮ লাখ SIM Card বাতিল ঘোষণা! কি কারনে মোবাইল সিম কার্ড বাতিল হচ্ছে, জেনে নিন।
কলকাতা হাইকোর্টের রায়ের পরিপ্রেক্ষিতে কি বলছেন মুখ্যমন্ত্রী?
২০১০ সালের পর বামফ্রন্ট সরকারকে সরিয়ে পশ্চিমবঙ্গের ক্ষমতায় আসে তৃণমূল সরকার। পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী হন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এদিন হাইকোর্টের রায়ের পরিপ্রেক্ষিতে কাউন্টার করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি সরাসরি বলেছেন, এই রায় তিনি মানেন না। উচ্চ আদালতের রায়ে যে পাঁচ লক্ষ ওবিসি সার্টিফিকেট বাতিল হয়েছে, সেই রায় মানেন না বলে সরাসরি মন্তব্য করেছেন তিনি। ঘটনা প্রসঙ্গে তিনি বিরোধী দলকে সরাসরি টার্গেট করেছেন। মুখ্যমন্ত্রীর টার্গেটে পদ্ম শিবির।
এদিন খড়দার সভা থেকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘এই রায় মানি না। একজন বিচারপতিকে দিয়ে এটা করানো হয়েছে।’ মুখ্যমন্ত্রী আরও বলেন,”ওবিসি সংরক্ষণ মন্ত্রীসভার অনুমোদনে পাশ হয়েছে। অতএব এটি একটি ‘আইন’। সেই আইন এভাবে বাতিল করা যায় না।” বলেও উল্লেখ করেন তিনি। সভা থেকে মুখ্যমন্ত্রী জোর গলায় বলেন, পশ্চিমবঙ্গে ওবিসি সংরক্ষণ চলছে, চলবে। এই সংরক্ষণ দেওয়া হয়েছে সংবিধানের পরিকাঠামো থেকে।
যারা চাকরি পেয়ে গিয়েছেন, তাঁদের ক্ষেত্রে কি হবে?
এদিন হাইকোর্টের রায়ের পরে আরো একটি বিষয় মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে। যারা ওবিসি সার্টিফিকেট ব্যবহার করে চাকরি পেয়ে গিয়েছেন? বা যারা সুযোগ সুবিধা নিয়েছেন? তাঁদের উপর কি রায়ের প্রভাব পড়বে? সংশ্লিষ্ট বিষয়েও বিবৃতি দিয়েছে কলকাতা হাইকোর্ট। আদালতের তরফে জানানো হয়েছে, বর্তমানে যারা চাকরি পাওয়ার প্রক্রিয়ায় রয়েছেন, চাকরি পেয়ে গিয়েছেন তাঁদের ক্ষেত্রে হাইকোর্টের নির্দেশ প্রভাব ফেলবে না। তবে বাকিরা নতুন করে চাকরি প্রক্রিয়ায় তাঁদের ওবিসি সার্টিফিকেট ব্যবহার করতে পারবেন না।
আরও পড়ুন, ব্যাংক একাউন্টে টাকা না থাকলেও কোনও জরিমানা হবে না। নিয়ম জেনে নিন।
এবার থেকে ওবিসি নির্ধারণ হবে কিভাবে?
এদিন হাইকোর্টের তরফে জানানো হয়েছে, ৫ লক্ষ ওবিসি সার্টিফিকেট বাতিল হল ঠিকই। তবে এবার থেকে কারা ওবিসি (OBC) হবেন, তা নির্ধারণ হবে নির্দিষ্ট প্রক্রিয়া অনুসারে, আইন মেনে। ওয়েস্ট বেঙ্গল ব্যাকওয়ার্ড ক্লাস ওয়েলফেয়ার কমিশনকে নির্ধারণ করতে হবে ওবিসিদের তালিকা। তারপর সেই তালিকা পৌঁছবে রাজ্যের আইনসভা বা বিধানসভায়। শেষমেষ বিধানসভা যাদের নাম অনুমোদন করবে, তারাই রাজ্যে ওবিসি প্রার্থী হিসেবে গণ্য হবেন, নির্দিষ্ট আইন মেনে এরপর সার্টিফিকেট পাবেন তাঁরা।
Written By Purbasha Chakraborty.