নতুন বছরের প্রাক্কালে সরকারি কর্মীদের বেতনবৃদ্ধি (Salary Hike) ও সুযোগ সুবিধা (Employee Benefits) নিয়ে বড় ঝটকা। আর বছর বছর বেতনবৃদ্ধি বা পে কমিশন (Pay Commsission) নয়। এবার দক্ষতার ভিত্তিতে বেতনবৃদ্ধির সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। এমন্তাই প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। যার জেরে নিয়মনিষ্ঠার সহিত কাজ না করলে নির্দিষ্ট সময় অন্তর ডিএ (Dearness Allowance) বা পে কমিশন হলেই বেতন না ও বাড়তে পারে। বিস্তারিত জেনে নিন।
Government may start performance based salary hike instead of DA or pay commission
অষ্টম বেতন কমিশন চালু করা নিয়ে জল্পনা চরমে পৌঁছেছে কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মীদের মধ্যে। যেহেতু ডিএ বেড়ে ৫০ শতাংশে পৌঁছেছে তাই সকলের আশা, খুব শীঘ্রই কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে নতুন বেতন কমিশন নিয়ে সুখবর ঘোষণা হতে পারে। কিন্তু সরকারি কর্মীদের সেই আশায় এবার জল ঢালল কেন্দ্র। এরপর থেকে আর হুট করতেই বাড়বেনা ডিএ। কারণ বাজারের দ্রব্যমূল্যের নিরিখে নয়, বরং এবার থেকে বেতন বৃদ্ধি নির্ধারণ করা হবে কর্মীদের দক্ষতা অনুযায়ী। অর্থাৎ যে যেমন কাজ করবেন, সেই মাফিকই তাদের বাড়ানো হবে বেতন।
দক্ষতার নিরিখে বেতন বৃদ্ধি
গত কয়েক মাসে অষ্টম বেতন কমিশনের (8th Pay Commission) দাবিতে কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মচারীদের মধ্যে উত্তেজনা ছিল চরমে। সংসদের উচ্চকক্ষ রাজ্যসভায় এই নিয়ে সরাসরি প্রশ্ন ওঠে। অর্থ প্রতিমন্ত্রী পঙ্কজ চৌধরি স্পষ্ট জানিয়ে দেন, বেতন কমিশন বসানোর পরিকল্পনা আপাতত সরকারের নেই। এর পর থেকেই নতুন ব্যবস্থার সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা শুরু হয়।
নতুন নিয়মের সুবিধা
নতুন ব্যবস্থার পক্ষে বলা হয়েছে,
প্রথমত, দক্ষতার ভিত্তিতে বেতনবৃদ্ধি বা Salary Hike হলে তা যুগোপযোগী হবে। বর্তমানে পে কমিশন (Pay Commission) গড়ে দশ বছর অন্তর বসে। ফলে কর্মচারীদের দীর্ঘ সময় বেতনবৃদ্ধির জন্য অপেক্ষা করতে হয়। দক্ষতাভিত্তিক ব্যবস্থায় এই সমস্যার সমাধান হতে পারে।
দ্বিতীয়ত , কর্মীদের কাজের মানোন্নয়ন এবং প্রশাসনিক দক্ষতা বাড়ানোর ক্ষেত্রে এটি কার্যকর ভূমিকা নিতে পারে।
তৃতীয়ত, এতে বেতনবৃদ্ধি আরও নিয়মিত এবং সুষম হতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, ২০১৬ সালে সপ্তম পে কমিশন কার্যকর হলে কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মচারীদের ন্যূনতম বেতন ৭ হাজার টাকা থেকে বেড়ে ১৮ হাজার টাকায় উন্নীত হয়। উচ্চপদস্থ কর্মচারীদের ক্ষেত্রে এই অঙ্ক ২.৫ লক্ষে গিয়ে দাঁড়ায়। কিন্তু দক্ষতার ভিত্তিতে বেতন নির্ধারিত হলে এই বৈষম্য দূর হবে।
অবশ্যই পড়ুন, পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকারি কর্মীদের বকেয়া DA নিয়ে কি ভাবছে রাজ্য সরকার। জানুয়ারি থেকে মহার্ঘ ভাতা পাবেন?
অসুবিধা
তবে এর সমালোচনার দিকও কম নয়।
প্রথমত, সরকারি কর্মীদের যোগ্যতা নির্ধারণের মানদণ্ড কী হবে, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। উচ্চপদস্থ আধিকারিকদের মধ্যে অনেকেই নীতি নির্ধারণের সঙ্গে যুক্ত। তাঁদের কাজের মাপকাঠি কী হবে, তা স্পষ্ট নয়।
দ্বিতীয়ত, স্বজনপোষণের সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। দক্ষতার ভিত্তিতে রিপোর্ট তৈরি করার সময় নিচুস্তরের কর্মীদের উপর অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি হতে পারে, যা সরকারি অফিসে দুর্নীতির পথ প্রশস্ত করবে।
তৃতীয়ত, ভারতে সরকারি চাকরিকে দীর্ঘকাল ধরে সুরক্ষিত কর্মসংস্থান হিসাবে বিবেচনা করা হয়। দক্ষতার ভিত্তিতে Salary Hike বা বেতন নির্ধারণ চালু হলে, এই সংজ্ঞায় বড়সড় পরিবর্তন আসতে পারে। এতে যুব সমাজের মধ্যে সরকারি চাকরির প্রতি আকর্ষণ কমার সম্ভাবনা রয়েছে। পাশাপাশি, কর্মচারীরা ব্যক্তিগত সাফল্যের দিকে বেশি নজর দিলে সমষ্টিগত কাজের মান কমে যেতে পারে।
চতুর্থত, বর্তমান ব্যবস্থায় বছরে দু’বার মহার্ঘ ভাতা (ডিএ) দেওয়া হয়। দক্ষতার ভিত্তিতে বেতন নির্ধারণ হলে, এই ভাতা দেওয়ার নিয়ম বহাল থাকবে কিনা, তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। পাশাপাশি, মুদ্রাস্ফীতির হার নিম্নমুখী হলে কীভাবে বেতনবৃদ্ধি নিশ্চিত করা হবে, তা নিয়েও সংশয় রয়েছে।
আরও পড়ুন, গরমের ছুটি বাড়ানো হবে আগামী বছরে? দাবি মেনে পশ্চিমবঙ্গ সরকার ছুটির তালিকা বদলাবে?
কবে চালু হচ্ছে এই নিয়ম?
নতুন বেতন বৃদ্ধির নিয়ম নিয়ে এখনো কোনো আনুষ্ঠানিক ঘোষণা করা হয়নি কেন্দ্র মারফত। তবে কর্মীদের সুবিধা (Employee Benefits) ও অসুবিধা দুটি বিবেচনা করেই পদক্ষেপ নিতে হবে সরকারকে। এটাই দেখার যে শেষ পর্যন্ত কি সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
Written by Nabadip Saha.