সরকারি চাকরি করছেন, মাস গেলে মোটা টাকা মাইনে নিচ্ছেন, অথচ রাজ্য সরকারী কর্মীদের একাংশ কাজকর্ম লাটে তুলে দিয়ে যাচ্ছেতাই মনোভাব দেখাচ্ছেন। আর এবার থেকে এই ধরনের কার্যকলাপ যে একেবারেই বরদাস্ত করা হবে না, তা এবার বেশ কড়াভাবে বুঝিয়ে দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সরকারি দপ্তরগুলোতে সঠিক সময় আসেন না। ছুটি হওয়ার অনেক আগেই বেরিয়ে যান।
বেচাল দেখলেই সরকারী কর্মীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা, শুরু হচ্ছে বায়োমেট্রিক হাজিরা, কি করতে হবে, জেনে নিন
এই অভ্যাস এর আগের সিপিআইএমের জমানাতেও দেখা যেত। CPIM এর সরকারী কর্মী, ক্যাডার যারা ছিলেন, তারা সরকারি দপ্তরে নাম- কা- ওয়াস্তে এসে কাজকর্ম করে চলে যেতেন। কারো কিছু বলার থাকত না। আর সেই অভ্যাস বর্তমানে রাজ্য সরকারী কর্মীদের একাংশের মধ্যে লক্ষ্য করা যাচ্ছে। তাই এবার থেকে মুখ্যমন্ত্রী যে সেই ধরনের কোনো বেয়াদপি বরদাস্ত করবেন না, সেটা স্পষ্ট বুঝিয়ে দিয়েছেন। সরকারী কর্মীদের মানুষের জন্য কাজ করতে হবে।
আর সেই কারণে রাজ্য সরকার একাধিক পদক্ষেপের মধ্য দিয়েই তা স্পষ্ট করে দিয়েছে। দুয়ারে সরকার (Duare Sarkar) কর্মসূচির মাধ্যমে মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেওয়া হয়েছে সরকারি পরিষেবাকে। আর এবার সরকারি দপ্তরে সমস্ত সরকারী কর্মীদের হাজিরার জন্য বায়োমেট্রিক সিস্টেম (Biometric Attendance) চালু করার কথা ঘোষণা করা হয়েছে। সরকারী কর্মীরা যখন তখন ইচ্ছেমতো অফিসে আসবেন, আর চলে যাবেন, সেটা চলবে না। মুখের ছবি এবং আঙুলের ছাপ দিয়ে অফিসে লগ ইন, লগ আউট করতে হবে।
দিন কয়েক আগে ১৫ ই মার্চ দুপুর ১২ টা ৫ মিনিট নাগাদ নবান্নের ৫ তলায় ৫০৩ নম্বর রুম এবং ৪০৪ নম্বর রুমে গিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেখানে গিয়েই তিনি জানতে চান, ১০ তারিখ কারা কারা অফিসে কাজে যোগদান করেননি? যে সময়ে মুখ্যমন্ত্রী সেখানে গিয়েছিলেন, তখন স্বরাষ্ট্র দপ্তরে মাত্র ২৫ শতাংশ হাজিরা ছিল। তবে উপস্থিত যে সমস্ত সরকারি কর্মীরা ছিলেন, তাদের কাছ থেকে জানা যায়, অসুস্থ থাকার কারণে ৬ জন কর্মী সেই সময় আসতে পারেননি। বাকি দুই একজন ছুটিতে রয়েছেন।
এরপরে ১৬ তারিখে মুখ্যমন্ত্রী নবান্নর ১৪ তলায় যাওয়ার আগে ১২ তলায় একবার লিফট থেকে আচমকাই নেমে পড়েন। সেখানে গিয়েও নিজেই অফিসের হাজিরা সম্বন্ধে বিস্তারিত খোঁজখবর নেন। ১০ মার্চ বকেয়া DA এর দাবিতে সরকারি কর্মচারীদের একাংশের সংগঠন যৌথ সংগ্রামী মঞ্চ ধর্মঘটের (DA Strike) ডাক দেয়। আর সেই ধর্মঘটের বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ ঘোষণা করে নবান্ন। যোগ্য কারণ ছাড়া যদি কোনো সরকারি আধিকারিক এবং সরকারী কর্মী নিজের দপ্তরে অনুপস্থিত থাকেন, তাহলে তার বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে বলে নবান্নর তরফে নির্দেশিকায় জানিয়ে দেওয়া হয়।
ইতিমধ্যেই সেই প্রক্রিয়া শুরু হয়ে গিয়েছে। ধর্মঘটে যে সমস্ত কর্মীরা অংশ নিয়েছেন, তাদের শোকজ নোটিশ জারি করা হয়েছে। যদি সন্তোষজনক কোনো জবাব না পাওয়া যায়, তাহলে তাদের একদিনের বেতন কাটা যাবে, কর্মজীবন থেকে একদিন বাদ পড়বে, পেনশন এবং গ্র্যাচুইটি সহ অন্যান্য সুযোগ-সুবিধায় প্রভাব পড়বে। আর ডিএ নিয়ে এই আন্দোলনের আবহের মধ্যেই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজেই নবান্নের বিভিন্ন দপ্তরে নিজের চোখে গিয়ে খোঁজ খবর নেওয়া শুরু করেন।
PF একাউন্টে টাকা রাখলে আজই করে ফেলুন একাজ, নাহলে এপ্রিলের 1 তারিখে বিপদ।
আর তারপরেই দলীয় বৈঠকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, আগের সিপিআইএমের সরকারের আমলের থেকে অনেক বেশি পরিমাণে কাজ হচ্ছে। মানুষের ঘরে ঘরে পরিষেবা পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে। সরকারি কর্মচারীদের মধ্যে অধিকাংশই ভালো কাজ করছেন। তবে একাংশ সরকারি কর্মচারীরা বিরোধী দলের হয়ে নানা রকম কুৎসা এবং অপপ্রচার প্রচার চালিয়ে যাচ্ছেন। এক্ষেত্রে প্রকৃত তথ্য তুলে ধরতে হবে।
শুধু তাই নয়, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ডিএ বিতর্ক প্রসঙ্গে জানান, বাম আমলে মাত্র ৩৩ শতাংশ DA দেওয়া হতো। আমাদের সরকার এসে সেটা ১০৬ শতাংশ দিচ্ছে।
কেন্দ্রীয় সরকারের চাকরি আর রাজ্য সরকারের চাকরি এক নয়। কেন্দ্র এবং রাজ্যের পরিকাঠামো সম্পূর্ণ আলাদা। ফলে চাকরি এবং বেতন দুটোই আলাদা। রাজ্যের চাকরি করে কেন্দ্রের সমান বেতন দাবি করা অনৈতিক। যতটা আমাদের সামর্থ্য সেই হিসেবে DA দিয়েছি। কিন্তু কেউ একবারও বলছেন না, কেন্দ্রের কাছে রাজ্যের যে বকেয়া পাওনা রয়েছে, সেটা কেন দেওয়া হচ্ছে না?
এই প্রসঙ্গেই রাজ্যের সমস্ত সরকারি দপ্তরে এবার নয়া পদ্ধতিতে হাজিরা চালু করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সেক্ষেত্রে বায়োমেট্রিক ব্যবস্থার (Biometric Attendance) মাধ্যমেই সরকারি কর্মচারীদের অফিসের ভিতরে ঢুকতে হবে এবং বেরোতে হবে। বিভিন্ন দপ্তরে আচমকা ভিজিট করে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সরকারি কর্মীদের উপস্থিতি নিয়ে অসন্তুষ্ট হয়েছেন। তাই এবার নবান্নের তরফে কড়া পদক্ষেপ গ্রহণ করা হচ্ছে।
Written by Rajib Ghosh.