Indian Penal Code – আজ থেকে সারা দেশে কার্যকর হলো নতুন আইন ভারতীয় ন্যায় সংহিতা। সাধারণ জীবনে কি কি প্রভাব ফেলবে দেখুন

১ জুলাই ২০২৪ অর্থাৎ আজ থেকে, বদলে যেতে চলেছে Indian Penal Code বা ভারতের সম্পূর্ণ আইনি ব্যবস্থা। Bharatiya Nyaya Sanhita চালু হলো বিরোধী পক্ষের তীব্র আপত্তি সত্ত্বেও মোদী সরকার দেশে লাগু করছে নতুন আইন। এই আইনের মাধ্যমে ব্রিটিশ শাসনকালে প্রণীত তিনটি প্রধান আইন – ভারতীয় দণ্ডবিধি (IPC), ভারতীয় ফৌজদারি দণ্ডবিধি (CRPC) এবং ভারতীয় সাক্ষ্য আইন (Evident Act) – 75 বছরের পর অবশেষে প্রতিস্থাপিত হচ্ছে।

তাদের পরিবর্তে কার্যকর হবে নতুন তিনটি আইন – ভারতীয় ন্যায় সংহিতা (Bharatiya Nyaya Sanhita), ভারতীয় নাগরিক সুরক্ষা সংহিতা এবং ভারতীয় সাক্ষ্য অধিনিয়ম। এই নতুন আইনগুলি কেবল নাম পরিবর্তন নয়, বরং অপরাধ, বিচার ব্যবস্থা এবং শাস্তির ক্ষেত্রে ব্যাপক পরিবর্তন আনছে। আগের চেয়ে আরও কঠিন হতে চলেছে শাস্তি এই আইন গুলিতে।

Indian Penal Code 2024

মোদি সরকারের এই নতুন আইন মেনে নিতে পারেনি বিরোধী পক্ষগুলি। সংসদে বিল পেশ হওয়ার পর থেকেই বিরোধিতা শুরু হয়, এবং সংসদে আলোচনা না করে বিরোধীরা প্রতিবাদ জানান। পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় থেকে শুরু করে কংগ্রেস সুপ্রিমো রাহুল গান্ধী পর্যন্ত বিরোধিতা করেছেন এই নতুন আইনের। আইপিসি-র ১২৪(ক) ধারার পরিবর্তে, ন্যায় সংহিতার ১৫২ ধারাতে দেশের সার্বভৌমত্ব এবং ঐক্যের বিরোধিতার ক্ষেত্রে কঠোর শাস্তির বিধান রাখা হয়েছে।

বিরোধীদের আশঙ্কা, এই বিধানগুলি সরকারের সমালোচকদের বিরুদ্ধে দমনমূলক পদক্ষেপ হিসেবে ব্যবহৃত হতে পারে। Indian Penal Code এর নতুন আইনের মাধ্যমে পুলিশের ক্ষমতা বৃদ্ধি পেয়েছে এবং এটি নিয়ে আইনজীবীদের মধ্যেও উদ্বেগ রয়েছে। তবে সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয় অভিযুক্তের অধিকারকে সুরক্ষিত করার উদ্দেশ্যে বিভিন্ন পরিবর্তন আনা হয়েছে নতুন আইনে এবং তাই সেইসব বিতর্ককে উপেক্ষা করেই ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুর সম্মতি নিয়ে বিল আইনে পরিণত হয়। আজ থেকে এগুলি কার্যকর হবার কথা।

Bharatiya Nyaya Sanhita

নতুন আইনে কি কি পরিবর্তন এল?

আইপিসির পরিবর্তে নতুন ভারতীয় ন্যায় সংহিতাঃ
১. নতুন আইনে ২০টি নতুন অপরাধ যুক্ত করা হয়েছে:

হত্যা, আত্মহত্যায় প্ররোচনা, আক্রমণ, গুরুতর আঘাতের মতো অপরাধ
সংগঠিত অপরাধ, সন্ত্রাসবাদ, গণহত্যা
নারী সুরক্ষা সংক্রান্ত অপরাধ
চুরি, ডাকাতি, প্রতারণা
সাইবার অপরাধ, আর্থিক প্রতারণা
গণপিটুনি
পরিবেশ দূষণ
মানব পাচার

মহিলাদের হার বা মোবাইল ছিনতাই
২. Indian Penal Code বা ভারতীয় দণ্ডবিধিতে থাকা ১৯টি বিধান বাদ দেওয়া হয়েছে:
দেশদ্রোহ (নতুন আইনে “ভারতের সার্বভৌমত্ব, একতা এবং অখণ্ডতাকে বিপন্ন করা” অপরাধ হিসেবে বিবেচিত হবে)

৩. ৩৩টি অপরাধের জন্য কারাদণ্ডের সাজা বৃদ্ধি করা হয়েছে

নারী ধর্ষণ (১৮ বছরের কম বয়সী হলে মৃত্যুদণ্ড বা আজীবন কারাদণ্ড)
গণধর্ষণ (ন্যূনতম ২০ বছর থেকে আজীবন কারাবাস)
চুরি, ডাকাতি, প্রতারণা

৪. ৮৩টি অপরাধের জন্য জরিমানা বৃদ্ধি করা হয়েছে
পরিবেশ দূষণ
মানব পাচার

৫. নারী সুরক্ষার জন্য বিশেষ বিধানঃ
যৌন হিংসার মামলার ক্ষেত্রে নির্যাতিতার বয়ান নেওয়া হবে তাঁরই বাড়িতে।
একজন মহিলা ম্যাজিস্ট্রেটের সামনে সেই বয়ান নথিবদ্ধ করার কথা বলা হয়েছে।
বিয়ে বা অন্য প্রতিশ্রুতি দিয়ে মহিলাদের সঙ্গে যৌন সম্পর্কের অপরাধের জন্য ১০ বছরের সাজা।

৬. অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ঃ
গণপিটুনির ক্ষেত্রে কারও মৃত্যু হলে মৃত্যুদণ্ড পর্যন্ত সাজার বিধান।
মহিলাদের হার বা মোবাইল ছিনতাইয়ের মতো ঘটনার বিচারের জন্য আলাদা আইন।
সিআরপিসির পরিবর্তে নতুন ফৌজদারি আইন:-

১. অভিযুক্তের অধিকার

  • নতুন আইনে অভিযুক্তের অধিকারকে আরও শক্তিশালী করা হয়েছে।
  • একজন অভিযুক্ত ব্যক্তি তাদের পছন্দের আইনজীবী নির্বাচন করতে পারবেন।
  • পুলিশ যদি বিনা পরোয়ানায় গ্রেফতার করে, তবে অবশ্যই অভিযুক্তকে জানাতে হবে কোন অপরাধে গ্রেফতার করা হয়েছে।
  • ধৃত ব্যক্তির শারীরিক পরীক্ষার জন্য কেন্দ্রীয় বা রাজ্য সরকার কর্তৃক একজন চিকিৎসকের ব্যবস্থা করা বাধ্যতামূলক।

২. গ্রেফতার

বৃহত্তর স্বার্থে ব্যক্তিকে পরোয়ানা ছাড়াই গ্রেফতার করা যাবে।
তদন্তের স্বার্থে পুলিশকে আরও বেশি ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে।
তবে, তদন্ত শেষ করার জন্য নির্দিষ্ট সময়সীমা নির্ধারণ করা হয়েছে।

৩. বিচার প্রক্রিয়া:
মামলা নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে নিষ্পত্তি করার মাধ্যমে বিচার প্রক্রিয়ায় গতি আনা হবে।
ফৌজদারি বিচার ব্যবস্থার দক্ষতা বৃদ্ধির উপর জোর দেওয়া হয়েছে।

৪. বাতিল ও সংশোধিত ধারা:
নতুন আইনে কিছু ধারা বাতিল করা হয়েছে এবং কিছু সংশোধন করা হয়েছে।

এভিডেন্স অ্যাক্টের পরিবর্তে নতুন ভারতীয় সাক্ষ্য আইন:-

১. ভিডিও রেকর্ডিং:
অপরাধের প্রমাণ হিসেবে ভিডিও রেকর্ডিং বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।
প্রমাণ হিসেবে ব্যবহারের জন্য ভিডিও রেকর্ডিং ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে নিম্ন আদালতে জমা দিতে হবে।

২. অনলাইন অভিযোগ:
অনলাইনে অভিযোগ করলে তিন দিনের মধ্যে সংশ্লিষ্ট থানায় গিয়ে এফআইআরে সই করতে হবে।
এফআইআরে সই না করলে অভিযোগ গ্রাহ্য করা হবে না।

Bharatiya Nyaya Sanhita 1st Case

নতুন দিল্লি রেলওয়ে স্টেশনের ফুটওভার ব্রিজের নিচে বাধা দেওয়ার জন্য এবং বিক্রি করার জন্য আজ অর্থাৎ ১ জুলাই ভারতীয় ন্যায় সংহিতার ধারা 285 এর অধীনে এই মামলা দিয়ে Bharatiya Nyaya Sanhita এর প্রথম কেস নথিভুক্ত হলো। এফআইআর অনুসারে, অভিযুক্তের নাম পঙ্কজ কুমার, যিনি বিহারের বারহের বাসিন্দা। অভিযুক্ত ব্যক্তি কমলা মার্কেট এলাকার প্রধান সড়কের কাছে একটি গাড়িতে পানি ও তামাক বিক্রি করছিলেন, যা যাত্রীদের বাধা ও সমস্যায় ফেলেছিল। এফআইআর বলেছে যখন টহল অফিসাররা কুমারকে তার কার্টটি সরাতে বলল, তিনি তাদের উপেক্ষা করেছিলেন। পরে এফআইআর নথিভুক্ত করা হয়।
Collected by Nabadip Saha.

শেয়ার করুন: Sharing is Caring!

Leave a Comment