বেতন কাটা হবে শিক্ষকদের, জরুরী নির্দেশ।
সঠিক সময়ে শিক্ষকদের স্কুলে উপস্থিত হওয়ার জরুরী নির্দেশ। অন্যথায় বেতন কাটা হবে। উচ্চ পদস্থ অধিকারিকের কাছে হাতে নাতে ধরা খাওয়ার পর এই সিদ্ধান্ত। বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক।
স্কুলে দেরি করলে বেতন কাটা যাবে।
সময়- ঘড়ির কাঁটায় ঠিক বেলা ১২টা। পুজোর ছুটির পরে খুলেছে স্কুল। স্কুল চত্বরে ছাত্র-ছাত্রীরা ঘোরাফেরা করছে। সময় জানান দিচ্ছে স্কুলে ক্লাস চলার কথা। কিন্তু বিদ্যালয়ের ভিতর কোনো ক্লাস চলতে দেখা যাচ্ছে না। কোনো শিক্ষক বা অশিক্ষক কর্মচারীদেরও দেখা মিলছে না। স্কুলটি খোলা হয়েছে শুধুমাত্র। শিক্ষক অনুপস্থিত। এই দৃশ্য দেখা গেল কোচবিহারের মেখলিগঞ্জ এর কুচলিবাড়ির একটি প্রাথমিক স্কুলে। কিন্তু কেন এই পরিস্থিতি?
খোঁজ নিয়ে জানা গেল, স্থানীয় বাসিন্দারা দীর্ঘদিন ধরে স্কুলে সঠিক সময় শিক্ষক না আসার অভিযোগ করছেন। এবার সেই অভিযোগের সত্যতা যাচাই করতে ঠিক ওই সময়ে স্কুলে এসে হাজির হয়েছেন স্থানীয় বিডিও বা সমষ্টি উন্নয়ন আধিকারিক। নিজের চোখে এই দৃশ্য দেখার পরে স্থানীয় মানুষদের সঙ্গে কথা বলে জানতে পারেন, বেতন ঠিক মতো নিলেও, স্কুলে সঠিক সময়ে শিক্ষক না আসার অভিযোগ দীর্ঘদিনের।
গ্রামবাসীরা BDO-র কাছে অভিযোগ জানান। এরপরই ব্লক প্রশাসনের পক্ষ থেকে মেখলিগঞ্জ দক্ষিণ সার্কেলের এসআইয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। ওই স্কুলে সঠিক সময়ে শিক্ষকরা উপস্থিত নেই কেন? এটা কি বিচ্ছিন্ন ঘটনা? ওই সার্কেলের মধ্যে অন্যান্য স্কুলেও কি একই ধরনের ঘটনা ঘটছে? বিস্তারিতভাবে রিপোর্ট চাওয়া হয়েছে।
প্রসঙ্গত, রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে শিক্ষকদের উদ্দেশ্যে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ সরকারি নির্দেশ জারি করা হয়েছে। উল্লেখযোগ্য হল, সমস্ত স্কুলে সকাল সাড়ে ১০টার মধ্যে শিক্ষকদের প্রবেশ করতেই হবে। অন্যথায় বেতন কাটা হবে। যেসমস্ত স্কুলে মর্নিং সেশন রয়েছে, তারা ১৫ মিনিট দেরি করতে পারেন।
সম্প্রতি ছাত্র-ছাত্রীদের সঙ্গে খোলামেলা সম্পর্ক তৈরি করার জন্য সরকারের পক্ষ থেকে শিক্ষকদের বায়োডাটা নির্দিষ্ট নোটিশ বোর্ডে টাঙিয়ে দেওয়ার নির্দেশ জারি করা হয়েছে। এমন একটা সময়ে সরকারের তরফে রাজ্যের শিক্ষা ব্যবস্থায়, বিশেষ করে শিক্ষকদের উদ্দেশ্যে কড়া পদক্ষেপ গ্রহণ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, যে সময়ে রাজ্যজুড়ে শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতি নিয়ে তোলপাড় চলছে।
কলকাতার রাস্তায় শিক্ষকের চাকরির দাবিতে ধর্ণা চলছে। ফলে প্রশ্ন উঠছে, সার্কুলার জারি করতে হচ্ছে কেন? তবে কি শিক্ষকদের মধ্যে অশিক্ষক সুলভ মনোভাব ইদানিং লক্ষ্য করা যাচ্ছে? তার কারণ কোনো ব্যক্তি যার অধীনে কাজ করেন, তার নির্দেশ মানতে হয়, না মানলে বেতনের উপর প্রভাব পড়ে। এটাই স্বাভাবিক। ফলে সরকারি চাকরি করবেন, বিশেষ করে সমাজকে শিক্ষাদানের কাজে নিয়োজিত থাকবেন যারা, তারা যদি এই ধরনের নিয়ম বহির্ভূত আচরণ করেন, যার ফলে সমাজে খারাপ প্রভাব পড়তে পারে, সেক্ষেত্রে বাধ্য হয়েই সরকারকে বেতন কাটার মতো কড়া পদক্ষেপের নির্দেশ জারি করতে হচ্ছে।
লঞ্চ হতেই, বাজার কাঁপাচ্ছে RBI এর ভারতীয় ডিজিটাল মুদ্রা, বিনিয়োগে, 3 দিনে টাকা ডবল।
এক্ষেত্রে আরেকটি বিষয়ে চর্চা শুরু হয়েছে। যখন সরকারের পক্ষ থেকে শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু করা হচ্ছে, সেই সময়ে যারা সত্যিই মেধাবী পড়ুয়া রয়েছেন, তারা সেই সুযোগ গ্রহণ করতেই পারেন। বিভিন্ন সময়ে অনেকেই বলতে শোনা যায়, মেধাবী ছাত্র-ছাত্রীরা রাস্তায় বসে রয়েছেন। আর অন্যান্যরা ব্যাকডোর দিয়ে চাকরি পেয়েছেন। যে সমস্ত ছাত্র-ছাত্রীরা মেধাবী তাদের মধ্যে আত্মবিশ্বাস অবশ্যই আছে বলে মনে করা হয়। ফলে যখন সুযোগ তৈরি হয়েছে সেই সুযোগ গ্রহণ করা উচিত বলেই মনে করেন অনেকে।
কোচবিহারের মেখলিগঞ্জ এর ওই প্রাথমিক স্কুলের ঘটনায় বিদ্যালয়ে পরিদর্শক সংশ্লিষ্ট শিক্ষককে শোকজ নোটিশ পাঠিয়েছেন। ওই শিক্ষক প্রাথমিকভাবে জানিয়েছেন, তিনি সঠিক সময়েই স্কুলে আসার জন্য বেরিয়েছিলেন। কিন্তু রাস্তায় তার গাড়িটি খারাপ হয়ে যাওয়ায় তার দেরি হয়ে যায়। এটা সত্যি না মিথ্যা তা নিয়ে আলোচনা হতেই পারে।
কিন্তু তার সঙ্গে এটাও ঠিক, রাজ্যের বহু স্কুলেই হয়তো এরম ধরনের ঘটনা ঘটছে। যা সব সময় সচরাচর সবাই জানতে পারে না। বর্তমানে অধিকাংশ শিক্ষকদের প্রতি সমাজের ক্ষোভ লক্ষ্য করা যাচ্ছে। এর জন্য দায়ী ওই শিক্ষকদের আচার-আচরণ। আর ঠিক এই কারণেই রাজ্য সরকারকে বাধ্য হয়ে বেতন কাটার মতো কড়া নির্দেশ জারি করতে হচ্ছে।
Written by Rajib Ghosh.