ফের নোট বাতিলের সিদ্ধান্ত নিতে চলেছে কেন্দ্রীয় সরকার? দেশজুড়ে কি ফিরতে চলেছে নোটবন্দির সেই দুঃসহ স্মৃতি? এই প্রশ্নগুলো ফের ঘুরপাক খেতে শুরু করেছে। কারণ দেশের শীর্ষ আদালত সুপ্রিম কোর্টের সাংবিধানিক বেঞ্চের ৫ বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চ রিজার্ভ ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়াকে হলপনামা দাখিল করতে বলেছে।
সেই হলফনামায় সুপ্রিম কোর্টে জানাতে হবে ৫০০ এবং ১০০০ টাকার নোট বাতিল করার সরকারি সিদ্ধান্তে RBI আইনের ২৬ নম্বর ধারা অনুযায়ী সরকারের এটি করার ক্ষমতা আছে কিনা, সেই বিষয়টিও খতিয়ে দেখা হবে।
প্রসঙ্গত, প্রায় ৬ বছর আগে ২০১৬ সালে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি রাত ৮টায় দেশবাসীর উদ্দেশ্যে জরুরী বক্তব্য রাখতে গিয়ে নোট বাতিলের কথা ঘোষণা করেছিলেন।
রিজার্ভ ব্যাংকের আইনের ২৬ নম্বর ধারা অনুযায়ী সরকারের এই সিদ্ধান্ত নেওয়া কতখানি যুক্তি এবং আইন সম্মত সেই বিষয়টি সুপ্রিমকোর্ট জানতে চাইছে। আর এরপরই সেই স্মৃতি উস্কে দিচ্ছে আবার নোট বাতিলের আশংকা। কারন ইতিমধ্যেই ২০০ টাকা ও ৫০০ টাকার নতুন নোট পরিবর্তনের প্রস্তাব দিয়েছে কেন্দ্র। আর তারপরি জনস্বার্থ মামলা হয়। সেই মামলায়ই নয়া নির্দেশ।
দেশের প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী পি চিদম্বরম সুপ্রিম কোর্টে আবেদনে উল্লেখ করেছেন, প্রধানমন্ত্রী রাত ৮টায় নোট বাতিলের কথা ঘোষণা করার ২৪ ঘন্টার মধ্যেই সেই সিদ্ধান্ত কার্যকর করা হয়েছিল। এত দ্রুত কিভাবে সিদ্ধান্ত নেওয়া যেতে পারে? প্রশ্ন তুলেছেন তিনি। চিদাম্বরম আরো উল্লেখ করেছেন, কেন্দ্রীয় সরকারের কাছ থেকে ৭ নভেম্বর একটি চিঠি পাওয়ার পর RBI Board ৮ নভেম্বর ২০১৬ তে দিল্লিতে বৈঠক করে।
৫০০ এবং ১০০০ টাকার নোট বাতিল করার সুপারিশ করার জন্য প্রস্তাব পাস করেছিল। সেই প্রস্তাব কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভায় পাঠানোর কয়েক মিনিটের মধ্যে গৃহীত হয়। যদিও ৭ই নভেম্বরের সেই চিঠিটি সরকারের কোনো রেকর্ডে নেই। তবে আদালতে সরকারকে প্রাসঙ্গিক সমস্ত তথ্য তুলে ধরতে হবে। আর এরই মধ্যে নয়া জল্পনার সম্ভাবনা উস্কে দিচ্ছে।
RBI এর নির্দেশে আরও একটি সরকারী ব্যাংক বাতিল হলো, গ্রাহকের টাকার কি হবে?
প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী চিদম্বরম সুপ্রিম কোর্টে আবেদনে সেই সময়কার দুঃসহ স্মৃতির কথা উল্লেখ করে জানান, দেশের প্রায় ১১ কোটি মানুষ প্রতিদিন লাইন দিয়ে দাঁড়িয়েছিলেন। বহু মানুষ সেই লাইনে দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকার ফলে অসুস্থ হয়েছেন। দৈনন্দিন কাজকর্ম ছেড়ে দিয়ে মানুষকে লাইনে দাঁড়াতে হয়েছিল। দেশজুড়ে অর্থনৈতিক কার্যকলাপ স্তব্ধ হয়ে গিয়েছিল।
কৃষকদের কাছে প্রয়োজনীয় জিনিস কেনার জন্য তহবিল ছিল না। মজুরি ছিলনা। ১৫ লক্ষ এবং ৪৪ হাজার কোটি টাকার নোট বাতিল করা হয়েছিল। পাশাপাশি, নোট বাতিলের পরে যে ২০০০ টাকার নোট দেশে চালু করা হয় সেই নোটগুলি সঠিকভাবে মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়ার জন্য ATM মেশিনগুলিকে আপডেট করা হয়নি। যার ফল ভুগেছে সারা দেশবাসী।
ফের নোট বাতিল?
এক্ষেত্রে চিদম্বরম ১৯৭৮ সালের নোট বাতিলের বিষয়টি উত্থাপন করে জানান, কেন্দ্রীয় সরকার হঠাৎ একটি আলাদা সংসদীয় আইনের মাধ্যমে নোট বাতিলের সিদ্ধান্ত নেয় এবং তা মুহূর্তের মধ্যে বাস্তবায়িত করে। নোট বাতিলের বিষয়ে যে মামলা রয়েছে, তা যদি নিষ্পত্তি না হয়, তাহলে ভবিষ্যতেও কেন্দ্রীয় সরকার একইভাবে নোট বাতিলের মতো সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে দেশবাসীকে দুঃসহ স্মৃতি ফিরিয়ে দিতে পারে।
অক্টোবরের মধ্যে সবাইকে নতুন করে আবার আধার কার্ড ভোটার কার্ড লিংক করতে হবে, কিভাবে করবেন শিখে নিন।
আর বি আই আইনের ২৪ এবং ২৬ নম্বর ধারা ব্যবহার করে Demonitization করা যায় কিনা সেই বিষয়টিও খতিয়ে দেখা উচিত।
সুপ্রিম কোর্টের ৫ বিচারপতি এস এ নাজির, এএস বোপান্না, ভি রামা সুব্রামানিয়াম, বি আর গাভাই এবং বি ভি নাগরথানার সাংবিধানিক বেঞ্চে এই Demonitization-এর মামলায় জেনারেল তুষার মেহতা বলেন, সরকার যে অর্থনৈতিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে, আদালত সেই ক্ষেত্রে সমানুপাতিকতার মতবাদ প্রয়োগ করেনি।
অ্যাটর্নি জেনারেল দাখিলের বিরোধিতা করে বলেছেন, বিষয়টি বর্তমানে অপ্রাসঙ্গিক। বিচারপতি বিভি নাগরথানা বলেন, কেন্দ্রীয় সরকার সেই সময় যে নোট বাতিলের সিদ্ধান্ত নিয়েছিল এবং যে পদ্ধতিতে সেটা গৃহীত হয়েছিল, সেটা সঠিক কিনা সেটা দেখে নেওয়া যেতে পারে। তবে এটি সরকারের সিদ্ধান্ত। এক্ষেত্রে লক্ষণ রেখা কতটা সেটাও আমরা জানি। তাই এই বিষয়ে কেন্দ্রীয় সরকার এবং আরবিআই এর বক্তব্য জানতে হবে।
চিদম্বরম ডিমনিটাইজেশনের সময়ের দেশজুড়ে সাধারণ মানুষের অসুবিধার কথা উল্লেখ করেছেন। সমস্যাগুলো হওয়ার মূল কারণ হিসেবে বলা হয়েছে, কেন্দ্রীয় সরকার ঝটজলদি তাড়াহুড়ো করে নোট বাতিলের সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। তাই দেশজুড়ে এই সমস্যা তৈরি হয়।
এই প্রসঙ্গে যে বিষয়টি ফের প্রশ্নের আকারে উঠে আসছে, সেটি হল, সুপ্রিম কোর্টে যদি কেন্দ্রীয় সরকার হলফনামা জমা না দেয় কিংবা সরকারের দেওয়া হলফনামায় যদি বিচারপতিরা সমস্ত তথ্য না জানতে পারেন, তাহলে কি ফের বাজারে পুরনো ৫০০ এবং ১০০০ টাকার নোট ফিরে আসতে পারে? যদিও এখনই এরকম ধরনের কোনো কিছু বলার মত সময় আসেনি।
অবসরপ্রাপ্ত কর্মীদের পেনশন বৃদ্ধির ঘোষণা, নতুন নিয়মে কত টাকা লাভ হবে?
পাশাপাশি আরেকটি প্রশ্ন উঠে আসছে, তবে কি নোট বাতিলের পরে যে নতুন ৫০০ এবং ২০০০ টাকার নোট বাজারে চালু হয়েছে, সেই নোট ফের বাতিল হয়ে যেতে পারে? সেটা জানার জন্য অবশ্যই অপেক্ষা করতে হবে। তবে সম্প্রতি ৫০০ ও ২০০ টাকার নোট নিয়ে নতুন জল্পনার সৃষ্টি হয়েছে। আগামীকাল সুনানীর পর আপডেট আসছে।
Written by Rajib Ghosh.