অতিমারী আবহে পর পর দুটি ডেউয়ের হিংসাত্মক গ্রাস দেখার পর তৃতীয় ঢেউয়ের ভয়ে কাঁপছে গোটা বিশ্ব। আর বলতে না বলতেই কয়েকদিনের মধ্যে সংক্রমনের হার এত গুনে বেড়েছে, যে সাধারন মানুষ ভাবারই সময় পায়নি যে কখন তৃতীয় ঢেউ আছড়ে পড়েছে। আর তার মধ্যেই স্বস্তির খবর মিললো সরকারী রিপোর্ট থেকে। ঠিক যেই গতিতে তৃতীয় ঢেউ তার শিখর ছোঁবে তার দ্বিগুন গতিতে নামবে গ্রাফ। আর তার জন্য স্কুল কলেজ ও খোলার প্রস্তাব দেওয়া হলো।
জানুয়ারী মাসের প্রথম সপ্তাহে একাধিক সরকারী সংস্থার সমীক্ষা ও গবেষণায় বলা হচ্ছে, জানুয়ারি মাসের শেষে বা ফেব্রুয়ারির শুরুর দিকে এই তৃতীয় ঢেউ শিখর ছুঁয়ে ফেলবে। ভারতীয় স্টেট ব্যাংক (SBI) এর একটি রিপোর্টেও তেমন ইঙ্গিত রয়েছে। স্টেট ব্যাংক এর রিপোর্টে বলা হচ্ছে, আগামী দুই থেকে তিন সপ্তাহের মধ্যে স্রোতের শিখর দেখা যাবে দেশে। রিপোর্ট বলছে ওমিক্রন যেমন রকেট গতিতে উপরের দিকে উঠছে ঠিক তেমনই হু হু করে নামবে গ্রাফ।
ভারতীয় স্টেট ব্যাঙ্কের অর্থনৈতিক গবেষণা রিপোর্ট তৈরি হয়েছে ব্যাঙ্কের মুখ্য আর্থিক উপদেষ্টা ডক্টর সৌম্যকান্তি ঘোষের নেতৃত্বে। বলা হয়েছে, কোভিডের তৃতীয় স্রোতের শিখর (Peak) ছুঁয়ে ফেলেছে মুম্বই সহ মহারাষ্ট্র। যদিও পুনে, মুম্বইতে আক্রান্তের সংখ্যা হু হু করে বেড়ে গিয়েছে। তবে, যদি জেলা গুলি কঠোর বিধি আরোপ করে , তাহলে মুম্বইয়ের শিখরের পর দেশে অন্য জায়গায় শিখর দুই তিন সপ্তাহের মধ্যে আসতে পারে।’
স্টেট ব্যাংক এর রিপোর্ট এর তথ্য বলছে যে রকেট গতিতে ওমিক্রন হু হু করে ছড়িয়েছে দেশে, সেই রকেট গতিতে ভ্যারিয়েন্টের সংক্রমণের গ্রাফও নামবে। বলা হচ্ছে, অন্ধ্রপ্রদেশ, বিহার, হিমাচলপ্রদেশ, জম্মু ও কাশ্মীর, রাজস্থান, ওড়িশার গ্রাম্য এলাকায় বাড়ছে ওমিক্রনের কেস। দ্বিতীয় স্রোতের প্রসঙ্গ তুলে সৌম্যকান্তি ঘোষ বলেন, বহু বড় জেলাতেই দেশে ২০২১ সালের স্রোতের সময় করোনার কেস শিখর ছুঁয়েছিল জাতীয় স্তরের শিখর ছোঁয়ার আগে।
দেশের ১৫ টি বড় জেলার পরিসংখ্যান তুলে ধরে স্টেট ব্যাংক এর মুখ্য আর্থিক উপদেষ্টা বলছেন, সংক্রমণ বহু জেলাতে কমতে শুরু করে দিয়েছে। দেশের ১৫ টি বড় জেলার মধ্যে ১০টি বড় শহর। ২০২১ সালের ডিসেম্বরে সেখানে যখন সংক্রমনের কেস লোড ছিল ৬৭.৯০%, তখন ২০২২ জানুয়ারিতে ৩৭.৪০% গিয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রসঙ্গত, ভ্যাকসিনেশনের দিক থেকে, সারাদেশে ৬৪% জনগন ডবল ডোজ পেয়েছেন। ৯২% জনগন ভ্যাকসিনের একটি ডোজ পেয়েছেন। ফলে ওমিক্রন ঘিরে ত্রাসের মাঝেও রয়েছে আশার আলো।
এদিকে, অতিমারীর ছোবল থেকে থেকে পড়ুয়াদের রক্ষা করতে দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। ধাপে ধাপে স্কুল খুললেও তৃতীয় ঢেউ এবং অমিক্রন আতঙ্কে ফের একবার তালা বন্ধ হয় স্কুলের গেটে। তবে অতিমারীর নামে স্কুল বন্ধ রাখার কারণ খুঁজে পাচ্ছেন না বিশ্ব ব্যাঙ্কের শিক্ষা বিষয়ক ডিরেক্টর জেমি সাভেদ্রা।
প্রথম ঢেউ শুরুর প্রথম থেকেই, সাভেদ্রা নিজের দলের সঙ্গে শিক্ষা ক্ষেত্রের উপর কোভিডের প্রভাবের উপর নজর রেখে চলেছেন। তিনি বলেন, শিশুদের টিকাকরণ পর্যন্ত তাদের বাইরে নিয়ে যাওয়া যাবে না, এমন কোনও বৈজ্ঞানিক যুক্তি নেই। স্কুল খোলা এবং করোনার মধ্যে কোনও যোগ নেই। বর্তমান পরিস্থিতিতে স্কুল বন্ধ রাখার কোনও যুক্তি নেই। সবই তো খোলা রয়েছে, সেখানে কি স্কুল পড়ুয়াদের জন্য নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। তারা সব জায়গায় যেতে পারছে, তবে স্কুলে নয় কেন?
আরও পড়ুন, মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা নিয়ে আজ কি জানালো শিক্ষাদপ্তর
আপনাদের কি মনে হয়, সবই তো খোলা রয়েছে, তবে কি স্কুল চালু রাখা উচিৎ? দীর্ঘদিন বন্ধ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থাকায় দীর্ঘমেয়াদী ক্ষতি হয়ে যাবে না তো? আপনার কি মনে হয়, কমেন্ট করে জানাবেন।