Subsidy for Mushroom Farming Business Idea
বিগত কয়েক বছর ধরে মাশরুমের চাহিদা বহুগুনে বেড়েছে। আর তার সাথে বেড়েছে মাশরুম চাষ বা Mushroom Cultivation এর প্রয়োজনীয়তা। মাশরুম চাষ বা Mushroom Farming বর্তমানে জনপ্রিয় ও লাভজনক ব্যবসা (Profitable Business Ideas). বিশেষ করে বর্তমানে যেকোনো চাষ এর ক্ষেত্রে আবহাওয়া, কীটনাশক, উপযুক্ত জমি নিয়ে যে সমস্যা গুলো প্রধানত কৃষকদের সম্মুখীন করতে হয়, এই মাশরুম চাষে সেগুলো গুলো থাকে না। আর অন্যদিকে মাশরুম চাষে মিশন ফর ইন্টিগ্রেটেড ডেভেলপমেন্ট অব হর্টিকালচার (MIDH) এবং রাষ্ট্রীয় কৃষি বিকাশ যোজনার (RKVY) সমন্বয়ে ৫০% পর্যন্ত সরকারি ভর্তুকি বা Government Subsidy পাওয়া যাচ্ছে। অর্থাৎ আপনি অর্ধেক টাকা বিনিয়োগ করলে বাকি অর্ধেক টাকা দেবে সরকার। কিভাবে এই ব্যবসা শুরু করবেন, নিয়ম কানুন, সরকারি ভর্তুকি (Subsidy for Mushroom Cultivation) কিভাবে পাবেন, কত টাকা বিনিয়োগে কত টাকা লাভ হতে পার, বিস্তারিত জেনে নিন।
MIDH RKVY Subsidy for Mushroom Cultivation
মাশরুম চাষ করা থেকে মাশরুম বিক্রয় করা পর্যন্ত সমস্ত প্রক্রিয়া সঠিক ভাবে না করলে লসের সম্ভাবনা রয়েছে, তাই কাজ শুরু করার আগে প্রথমে সঠিক পরিকল্পনা, সঠিক প্রশিক্ষণ নেওয়া, স্থান নির্বাচন, সেই স্থান কে চাষের উপযোগী পরিবেশ তৈরি করা, উচ্চ ফলনশীল মাশরুম বীজ তথা mushroom seeds বা mushroom spawn সংগ্রহ করা এবং সরকারি ভর্তুকির জন্য আবেদন করা। এই সমস্ত কাজ গুলো সঠিক সময়ে ধাপে ধাপে করতে হবে। তাহলেই চাষ শুরুর ২ থেকে ৩ মাসের মধ্যে বিনিয়োগের চেয়ে দ্বিগুন পরিমাণ আয় করা সম্ভব।
মাশরুমের পুষ্টিগুণ ও চাহিদা
মাশরুম শুধুমাত্র রেস্টুরেন্টের মেনুতে থাকা একটি আধুনিক ডিশ নয়। মাশরুম একটি পুষ্টিকর খাবার যাতে উৎকৃষ্ট উপাদানের প্রোটিন, ভিটামিন (B, C, D), ও ভাইটাল খনিজ যেমন পটাসিয়াম, সেলেনিয়াম, কপার এবং ফাইবারে ভরপুর। এতে ক্যালোরি, ফ্যাট ও সোডিয়ামের পরিমাণ কম থাকার কারণে এটি ওজন নিয়ন্ত্রণ, হৃদরোগ ও উচ্চ রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করে। এছাড়া মাশরুম পেশি গঠনে সাহায্য করে বলে জিম ট্রেনার রা এটি ডায়েট চার্টে উপরের তালিকায় রাখেন। তাই মাশরুমের চাহিদা ও জনপ্রিয়তা বেড়েই চলেছে।
মাশরুম চাষ পদ্ধতি -মাশরুম চাষের ধাপসমূহ
মাশরুম চাষে (Mushroom Cultivation) তাপমাত্রা ২০ থেকে ৩০ ডিগ্রি সেলসিয়াস ও আদ্রতা ৮০% এর কাছাকাছি রাখতে হয়। তাই পশ্চিমবঙ্গের আর্দ্র জলবায়ু এবং কাচামালের সহজলভ্যতা মাশরুম চাষের জন্য আদর্শ। এছাড়া যেকোনো চাষে যেমন, সার, কীটনাশকের প্রয়োজন এবং ঝড় বৃষ্টি, বা অতিবৃষ্টি অনাবৃষ্টির ভয় থাকে, মাশরুম চাষে তার কোনও ভয় নেই। ছোট্ট এটি প্লাস্টিক বা টালির ঘর করেও মাশরুম চাষ করা যায়। তাই পূর্বের কোনও অভিজ্ঞতা না থাকলেও অল্প প্রশিক্ষণ নিয়ে এই চাষ করা সম্ভব।
মাশরুম চাষ প্রশিক্ষণ
যেকোনো কাজ শুরুর আগে সেটি ভালো মতো শেখা জরুরী। আর মাশরুম চাষে উন্নত মানের সরকারি প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা রয়েছে। স্থানীয় প্রশাসন, বিডিও অফিস ও কৃষি অফিসে মাশরুম চাষের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। নিজের এলাকার অফিসে গিয়ে বিস্তারিত জানতে পারবেন। সেখানে প্রশিক্ষণের সাথে উন্নতমানের মাশরুম বীজ ও খড়, প্যাকেট ও কাচা মাল কথায় পাওয়া যাবে, সমস্ত তথ্যই জানতে পারবেন। সেই সাথে সরকারি ভর্তুকি বা ঋণের আবেদন কিভাবে করবেন, সেই তথ্য ও জানা যাবে। এছাড়া বিভিন্ন YouTube চ্যানেলেও ভিডিও সহকারে চাষের নিয়ম, যেকোনো সমস্যা ও তার প্রতিকারের উপায় নিয়ে প্রচুর ভিডিও পাবেন। প্রশিক্ষণের পাশাপাশি এগুলো দেখেও অভিজ্ঞতা অর্জন করা যায়।
মাশরুম চাষ, বীজ ও কাঁচামাল
বর্তমানে পশ্চিমবঙ্গে সাধারণত ৩ ধরনের মাশরুম চাষ বেশি করা হয়।
- অয়েস্টার (প্লুরোটাস)
- বাটন (অ্যাগারিকাস)
- শিতাকে মাশরুম
যারা প্রথম শুরু করবেন, তাদের জন্য অয়েস্টার বা প্লুরোটাস মাশরুম চাষ দিয়ে শুরু করা উচিৎ। কারন এতে বিনিয়োগের পরিমাণ যেমন কম, চাষ করা ও সহজ, ও ঘরের তাপমাত্রাতেই চাষ করা যায়, আর বেশি পরিচর্যার ও প্রয়োজন হয় না। দাম কম বলে স্থানীয় মার্কেটে চাহিদা ও বেশি। অপর দিকে বাটন ও শিতাকে মাশরুমের দাম ও বেশি আর পরিচর্যা ও বেশি করতে হয়।
চাষের প্রয়োজনীয় উপকরণ ও খরচ
মাশরুম চাষের (Mushroom Cultivation) জন্য সর্বপ্রথম উপযুক্ত একটি ঘরের প্রয়োজন। যেটিতে বায়ুচলাচল অরতে হবে, এবং ঘরের তাপমাত্রা ২০ থেকে ৩০ ডিগ্রি সেলসিয়াস ও আদ্রতা ৮০% এর কাছাকাছি থাকতে হবে। এবং জীবাণুমুক্ত করার জন্য ব্যবস্থা থাকতে হবে। এরপর ভালো মানের মাশরুম বীজ (mushroom spawn) প্রয়োজন। এবং কম্পোস্ট ( যেটি ধানের খড়, ধানের তুষ, বা জৈব বর্জ্য দিয়ে তৈরি করতে হয়)। এছাড়া পলিথিন ব্যাগ, এবং মাটির হাড়ি রাখতে হবে। প্রথমে ৩০ থেকে ৫০টি দিয়ে শুরু করা উচিৎ।
বিনিয়োগ বা খরচ
অয়েস্টার বা প্লুরোটাস মাশরুম চাষ করতে চাইলে, ৩০ থেকে ৫০টি বস্তা নিয়ে চাষ শুরু করতে প্রায় ২০,০০০ থেকে ৫০,০০০ টাকা বিনিয়োগ প্রয়োজন। আবার বাটন ও শিতাকে মাশরুম চাষের ক্ষেত্রে সেটি ৭০০০০ টাকা প্রয়োজন। আর সরকারি ভর্তুকি পেলে খরচ তো অর্ধেক কমেই যাবে।
মাশরুম চাষে লাভ কেমন?
সঠিক পদ্ধতি মেনে অয়েস্টার মাশরুম চাষ (Mushroom Cultivation) শুরু করলে, বীজ বপনের ২৫-৩৫ দিনের মধ্যে ভালো মানের ফলন পাওয়া যায়। এবং একটি ব্যাগ থেকে গড়ে ১ থেকে ২ কেজি পর্যন্ত অয়েস্টার মাশরুম পাওয়া যায়। আর স্থানীয় বাজারে অয়েস্টার মাশরুমের দাম প্রায় প্রতি কেজি ১৫০ থেকে ৩০০ টাকার মধ্যে। সরাসরি রেস্টুরেন্টে বিক্রয় করে দাম আরও বেশি পাওয়া যেতে পারে।
প্রথমে ৫০টি ব্যাগ দিয়ে চাষ শুরু করলে প্রথম ফলনে ১০০ কেজি মাশরুম প্রায় ৩০০০০ টাকা বিক্রয় করা যাবে। খরচ বাদ দিলে প্রথম ফসলে প্রায় ১৫হাজার থেকে ২অ হাজার টাকা আয় করা সম্ভব। আর প্রতি বছর ৩ থেকে ৪ বার একই ঘরে ফসল উৎপাদন করা যায়। তাতে ছোট্ট একটি ঘরের ক্ষেত্রে বছরে ৩ থেকে ৪ লাখ টাকা উপার্জন সম্ভব। বড় আকারে চাষ করলে উপার্জন আরও বাড়বে। আর সরকারি ভর্তুকি পেলে খরচ তো অর্ধেক কমেই যাবে। এদিকে শুকনো মাশরুম, মাশরুম পাউডার, মাশরুম স্যুপ বা পিকল তৈরি করে উপার্জন আরও বাড়ানো যেতে পারে। অর্থাৎ ইচ্ছে থাকলে, এই আয় থেকে একাধিক আয় করা সম্ভব।
মাশরুম চাষে সতর্কতা
মাশরুম চাষ খুবই সহজ। তবে ছত্রাক সংক্রমণ, তাপমাত্রা ও আর্দ্রতা নিয়ন্ত্রণের দিকে নজর রাখতে হবে। নিয়মিত জীবাণুমুক্ত করা প্রয়োজন। নতুবা গুনগত মান কমে যাবে। ছত্রাক সংক্রমণ রোধে নিয়মিত জীবাণুমুক্তকরণ, নিয়মিত ধানের খড় ও তুষ বদল ও চাষের পর বস্তা থেকে পুরনো কম্পোস্ট বের করে নিতে হবে।
Subsidy for Mushroom Cultivation – মাশরুম চাষে সরকারি সহায়তা
পশ্চিমবঙ্গ সরকার এবং কেন্দ্রীয় সরকারের যৌথ উদ্যোগে কৃষি বিভাগ বা রাষ্ট্রীয় কৃষি বিকাশ যোজনার (RKVY) মাশরুম চাষের জন্য ভর্তুকি (Subsidy for Mushroom Farming) প্রদান করে। এছাড়া স্বনির্ভর গোষ্ঠীর সদস্যদের জন্য স্বল্প সুদে ঋণের ব্যবস্থাও করে। এছাড়া মিশন ফর ইন্টিগ্রেটেড ডেভেলপমেন্ট অব হর্টিকালচার (MIDH) মিশনের অধীনে উন্নতমানের মাশরুম চাষের প্রশিক্ষণ এবং সরঞ্জামের জন্য আর্থিক সাবসিডিও (Subsidy for Mushroom Cultivation) পাওয়া যায়।
উপসংহার
বর্তমানে যেকোনো ব্যবসাতেই প্রচুর পরিমাণ মূলধন ও সেই সাথে মার্কেট রিস্ক ও লসের ভয় রয়েছে। আবার চাষের ক্ষেত্রেও রিস্ক রয়েছে। সেই দিক থেকে মাশরুম চাষ অপেক্ষাকৃত কম পরিশ্রম, কম বিনিয়োগ ও কম রিস্কের কাজ। তাই সরকারি সাহায্য নিয়ে মাশরুম চাষ করে (Subsidy for Mushroom Cultivation) প্রচুর টাকা আয় করুন ও নিজে প্রতিষ্ঠিত হোন। এই বিষয়ে আরও জানতে নিকটস্থ কৃষি অফিসে যোগাযোগ করুন।
