Labour Codes: দেশ জুড়ে চালু হলো নতুন শ্রম কোড। বাড়লো নুন্যতম বেতন, স্থায়ী নিয়োগ, গ্রাচুইটি ও কর্মচারী সুবিধা। সহজ ভাষায় জেনে নিন

বহু বিতর্কের মধ্য দিয়েও দেশ জুড়ে চালু হলো নতুন শ্রম কোড তথা New 4 Labour Codes. ২৯টি পুরনো আইনকে একীভূত করে গঠিত হলো চার শ্রম কোড। ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের বক্তব্য অনুযায়ী, আজ থেকে যে চারটি নতুন শ্রম কোড কার্যকর করেছে,সেগুলো মূলত দেশের শ্রমিক-কর্মচারীদের জীবনকে আরও সুরক্ষিত এবং ন্যায়ভিত্তিক করে তুলবে। এই কোডগুলি  যাতে কর্মক্ষেত্রে নিরাপত্তা, মজুরি এবং সামাজিক সুবিধা সহজ হয়। রাজ্যগুলির আপত্তি সত্ত্বেও এটি চালু হয়েছে, যা বিতর্কের জন্ম দিয়েছে কিন্তু কর্মীদের জন্য নতুন দরজা খুলে দিয়েছে। প্রায় ৪০ কোটি শ্রমিক ও স্থায়ী কর্মচারী এই আইনের আওতায় পড়বেন। এই আইনে কর্মীদের নিরাপত্তা, সম্মানজনক বেতন ও বিভিন্ন কর্মচারী সুবিধা মিলবে। এই নতুন শ্রম কোড আইন সহজ ভাষায় আলোচনা করা হলো।

What are the four Labour Codes?

কেন্দ্রীয় সরকার দ্বারা গঠিত এই চার কোড হলো মজুরি কোড, শিল্প সম্পর্ক কোড, সামাজিক নিরাপত্তা কোড এবং কর্মক্ষেত্র নিরাপত্তা কোড, যা ২২ নভেম্বর ২০২৫ থেকে সারা দেশে কার্যকর হলো। এগুলি শ্রমিকদের মজুরি, স্বাস্থ্য এবং নিরাপত্তা নিয়ে নতুন মাপকাঠি ঠিক করেছে। এর মূল পয়েন্ট গুলো হলো-

  • নিয়োগের সময় লিখিত চুক্তিপত্র দেওয়া বাধ্যতামূলক হয়েছে
  • এতে চাকরিপ্রার্থী চাকরির শুরুতেই নিরাপত্তা ও সুরক্ষা পাবে।
  • মহিলা কর্মীদের কেবলমাত্র সম্মতি থাকলেই নাইট শিফটে কাজ করানো যাবে।
  • তবে রাতে মহিলারা কাজ করলে তাদের নিরাপত্তার দায়িত্ব সংস্থার থাকবে।
  • ওভারটাইমের জন্য দ্বিগুণ মজুরি দিতে হবে।
  • ৪০ বছরের ওপর বয়সী কর্মীদের বিনামূল্যে বার্ষিক স্বাস্থ্য পরীক্ষা করতে হবে

রাজ্যের আপত্তি সত্ত্বেও কেন চালু হলো নতুন শ্রম কোড?

পশ্চিমবঙ্গ এবং তামিলনাড়ুর মতো রাজ্যগুলি ফেডারেল কাঠামো লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলেছে, কারণ তাদের দাবি, রাজ্যের সম্মতি ছাড়াই কেন্দ্র সরকার এগুলো জোর করে চালু করেছে। তৃণমূল কংগ্রেসের নেতারা বলছেন, এটি অগণতান্ত্রিক এবং শ্রমিক আন্দোলনের পরিস্থিতি উস্কে দেবে। যদিও কেন্দ্রের যুক্তি হলো, এই সংস্কার স্বনির্ভর ভারতের পথে গুরুত্বপূর্ণ, যা ২০৪৭-এর উন্নত ভারতের লক্ষ্যকে ত্বরান্বিত করবে। শ্রমিক সংগঠনগুলির মধ্যে বিভেদ দেখা যাচ্ছে, কেউ সমর্থন করছে আর কেউ প্রতিবাদ। এই বিতর্ক সত্ত্বেও, কর্মীদের সুবিধা বাড়ানোর উদ্দেশ্য স্পষ্ট। ফলে, দেশের অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে বলে আশা করা হচ্ছে। সরকারি মন্ত্রীরা বলছেন, এটি কর্মীদের স্বার্থে প্রধানমন্ত্রীর বড় পদক্ষেপ।

আরও পড়ুন, ৩০ নভেম্বরের মধ্যে এই ২টি কারনে বন্ধ হয়ে যাবে লাখ লাখ রেশন কার্ড। কি কি করতে হবে জেনে নিন

১ বছর চাকরিতেই গ্র্যাচুইটি সুবিধা

পুরনো নিয়মে (Old Labour Law) ৫ বছর চাকরি না করলে গ্র্যাচুইটি মিলত না, কিন্তু নতুন শ্রম কোডে এটি কমিয়ে ১ বছর করা হয়েছে। এখন স্থায়ী বা ফিক্সড টার্ম কর্মীরা মাত্র ১ বছর পরই এই এককালীন সুবিধা পাবেন, যা চাকরি ছাড়ার সময় কৃতজ্ঞতার প্রতীক। হিসাবের সূত্র সহজ: শেষ মাসিক বেতনের গড় ১৫ দিনের মজুরি প্রতি বছরের জন্য। উদাহরণস্বরূপ, ৫০ হাজার টাকা মাসিক বেতনে ৫ বছর চাকরির পর প্রায় ১.৪৪ লক্ষ টাকা পাওয়া যাবে। এটি কারখানা, খনি, রেলসহ সব সেক্টরে প্রযোজ্য। চুক্তিভিত্তিক কর্মীদের মধ্যে বৈষম্য কমবে এতে। কর্মীদের আর্থিক নিরাপত্তা বাড়বে।

গ্র্যাচুইটি হিসাব এবং যোগ্যতা

বেসরকারি কর্মীদের জন্য সূত্র হলো (শেষ বেতন × কাজের বছর × ১৫)/৩০, যা দ্রুত গণনা করা যায়। সরকারি কর্মীদের ক্ষেত্রে মহার্ঘ ভাতা যোগ করে (শেষ বেতন × বছর × ১৫)/২৬। যদি কেউ ৩০ হাজার টাকায় ২ বছর কাজ করে, তাহলে প্রায় ৩০ হাজার টাকা গ্র্যাচুইটি পাবে। এটি অবসর, পদত্যাগ বা সংস্থা বদলের ক্ষেত্রে মিলবে। নির্দিষ্ট মেয়াদের চুক্তিতে কাজ করলে স্থায়ী কর্মীদের মতোই সুবিধা। এতে যুবকরা দ্রুত সুবিধা পাবে। সরকার বলছে, এটি সামাজিক সুরক্ষাকে শক্তিশালী করবে।

অন্যান্য কর্মচারী সুবিধা: মাতৃত্ব, স্বাস্থ্য এবং মজুরি সংক্রান্ত নতুন নিয়ম

নতুন শ্রম কোড আইনের ফলে গিগ ওয়ার্কার, চুক্তিভিত্তিক কর্মী এবং মহিলা কর্মচারীরা প্রধানত বেশি উপকৃত হবেন। আর সামাজিক নিরাপত্তা কোডের অধীনে ৪০ কোটি কর্মী প্রভিডেন্ট ফান্ড, বীমা এবং অন্যান্য সুবিধা পাবেন। মহিলাদের সমান মজুরি এবং সব ধরনের কাজে সমান সুযোগ নিশ্চিত হয়েছে। ৪০ বছরের ওপরের কর্মীদের বিনামূল্যে স্বাস্থ্য চেকআপ বাধ্যতামূলক, যা দীর্ঘমেয়াদি সুস্থতা রক্ষা করবে। বিপজ্জনক কাজের জায়গায় ১০০% সুরক্ষা দেওয়া হবে আন্তর্জাতিক মান অনুসারে। ন্যূনতম মজুরি সময়মতো দেওয়া না হলে আইন লঙ্ঘন গণ্য হবে। এতে কর্মীদের আর্থিক স্থিতি মজবুত হবে। গিগ ইকোনমির কর্মীরাও এর আওতায় আসবে।

পশ্চিমবঙ্গের বকেয়া ডিএ মামলার রায় ঘোষণা কবে? অবশেষে অপেক্ষার অবসান

কর্মী এবং নিয়োগকর্তাদের জন্য

নতুন শ্রম আইন কর্মীদের জন্য বড় লাভ, কারণ দ্রুত গ্র্যাচুইটি, দ্বিগুণ ওভারটাইম এবং স্বাস্থ্য সুবিধা জীবনকে সহজ করবে। নিয়োগকর্তাদের চুক্তিপত্র এবং সময়মতো মজুরি দেওয়া বাধ্যতামূলক হলে প্রশাসনিক চ্যালেঞ্জ বাড়তে পারে। তবে এতে শিল্পের উৎপাদনশীলতা বাড়বে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন। রাজ্যপূঁজি এবং এমএসএমই সেক্টরে এর প্রভাব বেশি হবে। শ্রমিক সংগঠনগুলি এখনো সতর্ক, কিন্তু কর্মীদের সচেতনতা বাড়ানো জরুরি। সরকার বলছে, এটি স্বনির্ভরতার পথে মাইলফলক।

এই নতুন শ্রম কোডগুলি এক শ্রেণীর কর্মীদের জন্য আশার আলো, যদিও বিতর্ক চলছে। তাই সময়ই বলবে এটি হিতকর নাকি হানিকারক। সচেতন হয়ে উঠুন এবং অধিকার গ্রহণ করুন। যদি আপনার অভিজ্ঞতা থাকে, কমেন্টে শেয়ার করুন। এতে দেশের শ্রম ব্যবস্থা আরও মজবুত হবে। সকলে মিলে এই পরিবর্তনকে সফল করি।

শেয়ার করুন: Sharing is Caring!