আজকের ডিএ মামলার শুনানিতে পশ্চিমবঙ্গের রাজ্য সরকারি কর্মচারীদের মহার্ঘ ভাতা (Dearness Allowance) প্রদানে সর্বভারতীয় উপভোক্তা মূল্য সূচক (AICPI) ছিল মূল আলোচ্য বিষয়। আর এতদিন রাজ্য সরকার আদালত তথা সর্বসমক্ষে বলে এসেছে যে, “সরকার AICPI হারে DA দিতে বাধ্য নয়”। তবে মামলাকারীদের বিচক্ষণ আইনজীবী শ্রী গোপাল সুব্রহ্মণ্যম দাবি করেন, এই সূচকই ডিএ গণনার প্রাথমিক ভিত্তি হওয়া উচিত। আর পরোক্ষ ভাবে রাজ্য সরকারও এই নিয়ম মেনেই ডিএ ও পে কমিশনের সূচক হিসাব করেছে। AICPI এর ভিত্তিতে মহার্ঘ ভাতা নির্ধারণ করা হলে কর্মচারীদের অধিকার সুনিশ্চিত হবে। আদালতে এই যুক্তি উত্থাপিত হওয়ায় শুনানির গতিপ্রকৃতি বদলে যায়। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, আইনজীবীর এই যুক্তি মামলার মোড় ঘুরিয়ে দিয়েছে। এই প্রতিবেদনে আমরা আজকের শুনানির বিস্তারিত আলোচনা তুলে ধরব।
ডিএ মামলার শুনানিতে আইনজীবীর যুক্তি
সরকারি কর্মী তথা মামলাকারীদের পক্ষে সংগ্রামী যৌথ মঞ্চের আইনজীবী শ্রী গোপাল সুব্রহ্মণ্যম শুনানির শুরুতেই কেন্দ্রীয় মূল্য সূচক বা AICPI এর প্রাসঙ্গিকতা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, মহার্ঘ ভাতা কোনো দান নয়, বরং কর্মচারীদের ন্যায্য অধিকার। এই অধিকারের মূল ভিত্তি হল মূল্যবৃদ্ধি, যা AICPI দ্বারা পরিমাপ করা হয়। তাঁর বক্তব্য ছিল, রাজ্য সরকার নিজেই এই সূচককে ডিএ গণনার মানদণ্ড হিসেবে গ্রহণ করেছে। এই যুক্তি আদালতে জোরালোভাবে উপস্থাপিত হয়। এটি মামলার গতিকে নতুন দিশা দেয়।
আইনজীবীর মতে মহার্ঘ ভাতা শব্দটি আভিধানিক ও প্রশাসনিক এই দুটি ক্ষেত্রেই মূল্য বৃদ্ধির সম্পর্কে সম্পর্কিত। আর প্রতিবছর যে মূল্যবৃদ্ধি হয়, তার সঙ্গে সামঞ্জস্য রাখতেই DA দেওয়া হয়। আর প্রতিবছর কতটা মূল্যবৃদ্ধি হলো সেটা ঠিক করে কেন্দ্রীয় মূল্যবৃদ্ধি সূচক বা AICPI. কোনও রাজ্য সরকারের আলাদা মূল্য বৃদ্ধি সূচক নেই। তাই মহার্ঘ ভাতা দেওয়া আর AICPI এর সূচক না মানা, দ্বিচারিতার সমান।
DA Case Update: 536 সূচকের তাৎপর্য
ROPA 2009 এ ডিএ গণনার জন্য ৫৩৬ গড় সূচকের উল্লেখ রয়েছে, যা আজকের শুনানিতে গুরুত্ব পায়। আইনজীবী প্রমাণ করার চেষ্টা করেন, এই সূচকটি AICPI থেকে সরাসরি গৃহীত। এটি কোনো কাল্পনিক সংখ্যা নয়, বরং বৈজ্ঞানিকভাবে নির্ধারিত। তিনি বলেন, রাজ্য সরকার এই সূচক মেনে নিয়ে ডিএ নির্ধারণের নিয়ম তৈরি করেছে। এই যুক্তি শুনানিতে নতুন মাত্রা যোগ করে। এটি রাজ্যের নিজস্ব নীতির সঙ্গে সাংঘর্ষিকতা তুলে ধরে।
কেন্দ্র ও রাজ্যের DA বৈষম্য
আইনজীবী আরও তুলে ধরেন, কেন্দ্রীয় সরকার AICPI-এর ভিত্তিতে তাদের কর্মচারীদের ডিএ প্রদান করে। যখন কেন্দ্রের ডিএ ১২% ছিল, তখন রাজ্য মাত্র ২% ডিএ দিয়েছে। এটি ROPA 2009 এর মূল উদ্দেশ্যের সঙ্গে সাংঘর্ষিক বলে তিনি দাবি করেন। এই বৈষম্য কর্মচারীদের মধ্যে অসন্তোষ তৈরি করেছে। আইনজীবীর যুক্তি ছিল, রাজ্যের নীতি কেন্দ্রের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ হওয়া উচিত। এই বক্তব্য আদালতে গুরুত্ব পায়।
আদালতের প্রশ্ন ও জবাব
আজকের ডিএ মামলার শুনানির সময় বিচারপতিরা গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তোলেন, AICPI এর ভিত্তিতে ডিএ দেওয়া কি রাজ্যের জন্য বাধ্যতামূলক? এই প্রশ্ন মামলার মূল বিষয়কে স্পর্শ করে। আইনজীবী জবাবে বলেন, ROPA 2009 এ AICPI কে মান্যতা দেওয়া হয়েছে। তাই এর ভিত্তিতে ডিএ না দেওয়া রাজ্যের নিজস্ব নিয়মের লঙ্ঘন। তিনি এটিকে রাজ্যের দ্বিচারিতা হিসেবে উল্লেখ করেন। এই যুক্তি আদালতে শক্ত অবস্থান তৈরি করে। আর যা রাজ্যের নিয়মেই রাজ্য কার্যত ফেঁসে যায়।
শুনানির ফলাফল ও প্রভাব
আজকের শুনানি স্পষ্ট করে, ডিএ মামলা এখন কেবল আর্থিক বিষয় নয়। এটি এখন আইনি বিশ্লেষণ ও রাজ্যের দায়বদ্ধতার প্রশ্নে পরিণত হয়েছে। AICPI-এর ভূমিকা মামলার একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। মামলাকারীরা এই সূচকের গুরুত্ব সফলভাবে তুলে ধরেছেন। যদিও চূড়ান্ত রায় এখনও বাকি, তবে আজকের আলোচনা কর্মচারীদের মনোবল বাড়িয়েছে। এই মামলা রাজ্যের নীতির স্বচ্ছতার উপর নতুন আলোকপাত করেছে।
আরও পড়ুন, আজ দেশের সমস্ত ব্যাংকে নতুন সুদের হার ঘোষণা। কোথায় টাকা রাখলে বেশি সুদ, তালিকা দেখে নিন।
ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা
এই মামলার পরবর্তী শুনানি গুরুত্বপূর্ণ হবে। AICPI এর ভিত্তিতে ডিএ (Dearness Allowance) নির্ধারণের বিষয়টি আরও স্পষ্ট হতে পারে। রাজ্য সরকারের উপর চাপ বাড়বে বলে মনে করা হচ্ছে। কর্মচারীদের মধ্যে আশা জাগছে, ন্যায্য মহার্ঘ ভাতা পাওয়ার। মামলার ফলাফল রাজ্যের শ্রম নীতিতে বড় প্রভাব ফেলতে পারে। এটি ভবিষ্যতে অন্যান্য রাজ্যের জন্যও নজির হয়ে উঠতে পারে। এছাড়া এই মামলায় জয় হলে, ROPA 2019 এ ও কেন্দ্রীয় হারে DA পাওয়ার অধিকার পাবে। তবে কর্মীদের নিজেরদের মধ্যেও ভিন্ন মতবাদ রয়েছে, যেটি রাজ্যের আইনজীবীর জন্য সহায়ক। তবে সামগ্রিক দিক দিয়ে এই মামলায় জয় পেলে, কর্মীরা কেন্দ্রীয় হারে DA পেতে পারেন।