ইতিমধ্যেই পশ্চিমবঙ্গ সরকারের সরকারের ছুটির তালিকা প্রকাশিত হয়েছে। আর তার মধ্যেই আগস্ট মাসে নতুন ছুটি ঘোষণা (Holidays) করলো নবান্ন তথা পশ্চিমবঙ্গ অর্থদপ্তর। এমনিতেই আগস্ট মাসে পশ্চিমবঙ্গে একাধিক ছুটি রয়েছে। আর নতুন ছুটি ঘোষণায় স্বভাবতই উৎফুল্ল পশ্চিমবঙ্গের সরকারি কর্মী থেকে শুরু করে শিক্ষক শিক্ষিকা, পুর ও পঞ্চায়েত দপ্তরের কর্মীরা। কবে ছুটি, কিসের ছুটি ও বিজ্ঞপ্তিতে কি বলা আছে, বিস্তারিত জেনে নিন।
করম পুজো উপলক্ষে পশ্চিমবঙ্গে ছুটি ঘোষণা
রাজ্য সরকার আগামী ৩ সেপ্টেম্বর করম পুজো উপলক্ষে সরকারি ছুটি ঘোষণা (Karam Puja Holidays) করেছে। নবান্ন থেকে প্রকাশিত অর্থ দফতরের বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী, এই দিন সমস্ত সরকারি দফতর বন্ধ থাকবে। পুরসভা, ত্রিস্তর পঞ্চায়েত এবং সরকার পোষিত বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানেও ছুটি পালিত হবে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোও এই ছুটির আওতায় থাকবে। চা বাগানের আদিবাসী কর্মীরা এই দিনে ছুটি পাবেন। তবে, কলকাতার রেজিস্ট্রার অফ অ্যাসুরেন্স এবং কালেক্টর অফ স্ট্যাম্প রেভিনিউ দফতর খোলা থাকবে। শুধু তাই নয়। আগস্ট মাসেও প্রচুর ছুটি রয়েছে, নিচে আগস্ট মাসের সম্পুর্ন ছুটির তালিকা দেখে নিন।
করম পুজো: জনজাতি সম্প্রদায়ের গুরুত্বপূর্ণ উৎসব
করম পূজা (Karam Puja) পশ্চিমবঙ্গের জনজাতি সম্প্রদায়ের একটি উল্লেখযোগ্য উৎসব। এই উৎসব মূলত বাঁকুড়া, পুরুলিয়া, ঝাড়গ্রাম এবং পশ্চিম মেদিনীপুরে পালিত হয়। উত্তরবঙ্গের কিছু অঞ্চলেও এই পুজোর প্রচলন রয়েছে। ভাদ্র মাসের শুক্লা একাদশী তিথিতে এই উৎসব উদযাপিত হয়। করম গাছের ডাল মাটিতে পুঁতে এই উৎসবের শুরু হয়। কোথাও কোথাও এই উপলক্ষে মেলাও আয়োজিত হয়।
নবান্নের ছুটির বিজ্ঞপ্তি
নবান্ন থেকে জারি করা বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, করম পুজোর ছুটি সরকারি কর্মীদের জন্য প্রযোজ্য। এই ছুটি জনজাতি সম্প্রদায়ের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যকে সম্মান জানানোর প্রয়াস। ২০২৩ সালে প্রথমবার এই উৎসবে পূর্ণাঙ্গ ছুটি ঘোষণা করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এই উদ্যোগ রাজ্যের জনজাতি জনগোষ্ঠীর মধ্যে ব্যাপক প্রশংসা কুড়িয়েছে। সরকারি ও সরকার পোষিত প্রতিষ্ঠানের কর্মীরা এই ছুটির সুযোগ পাবেন। তবে, জরুরী পরিষেবায় নিয়োজিত নির্দিষ্ট কিছু দফতর এই ছুটির বাইরে থাকবে।
করম পুজোর তাৎপর্য ও আঞ্চলিক প্রভাব
করম পুজো মানভূম অঞ্চলের জনজাতি সম্প্রদায়ের কাছে বিশেষ গুরুত্ব বহন করে। এই উৎসব কৃষি ও প্রকৃতির সঙ্গে জড়িত একটি ধর্মীয় অনুষ্ঠান। শহরাঞ্চলে এই পুজো তেমন প্রচলিত না হলেও, গ্রামীণ এলাকায় এর উৎসাহ উল্লেখযোগ্য। বাঁকুড়া ও পুরুলিয়ায় এই উৎসব মেলা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে পালিত হয়। এই পুজো জনজাতি সম্প্রদায়ের সংহতি ও ঐতিহ্যের প্রতীক। রাজ্য সরকারের এই ছুটির ঘোষণা সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্যকে উৎসাহিত করে।
আরও পড়ুন, বাড়ি বসে সহজ কাজ করে, টাকা ইনকাম করতে এখানে দেখুন।
রাজ্য সরকারের সাংস্কৃতিক সংবেদনশীলতা
করম পুজোর জন্য ছুটি ঘোষণা রাজ্য সরকারের সাংস্কৃতিক সংবেদনশীলতার প্রমাণ। এই উদ্যোগ জনজাতি সম্প্রদায়ের প্রতি সরকারের শ্রদ্ধার পরিচায়ক। ছুটির ফলে কর্মীরা তাদের ঐতিহ্য পালনে অংশ নিতে পারবেন। এই পদক্ষেপ রাজ্যের সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্যকে আরও সমৃদ্ধ করবে। মুখ্যমন্ত্রীর এই সিদ্ধান্ত জনজাতি সম্প্রদায়ের মধ্যে ইতিবাচক বার্তা পৌঁছে দিয়েছে। আগামী দিনে এই ধরনের উদ্যোগ আরও জোরদার হবে বলে আশা করা যায়।
উপসংহার: করম পুজো ও রাজ্যের উদারতা
করম পুজোর ছুটি ঘোষণা রাজ্য সরকারের অন্তর্ভুক্তিমূলক নীতির প্রতিফলন। এই উৎসব জনজাতি সম্প্রদায়ের সাংস্কৃতিক পরিচয়কে তুলে ধরে। ছুটির ফলে কর্মীরা তাদের ধর্মীয় ও সামাজিক রীতিনীতি পালন করতে পারবেন। রাজ্যের বিভিন্ন অঞ্চলে এই উৎসব উৎসাহের সঙ্গে পালিত হবে। এই ছুটি আগে সেকশনাল বা আংশিক ছুটি ছিলো। কিন্তু বর্তমানে এই ছুটি এবার সকলেই পাবেন। সরকারের এই পদক্ষেপ সামাজিক সম্প্রীতি বৃদ্ধিতে সহায়ক হবে। করম পুজোর এই ছুটি রাজ্যের সাংস্কৃতিক ঐক্যের প্রতীক হয়ে উঠবে।