আধুনিক যুগের পরিবর্তনের সাথে বদলেছে পেশার ধরন ও। আর স্বল্প সময়ে উচ্চ আয়ের জন্য Work form Home, Affiliate Marketing প্রভৃতি কনসেপ্ট এসেছে। যেখানে নিজের বাড়িতে বসেই, কোনও মূলধন বা বিনা পুজিতে লাভজনক ব্যবসা ব্যবসা করে প্রচুর টাকা রোজগার করা সম্ভব। বর্তমানে অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিংয়ের মাধ্যমে প্রচুর টাকা ইনকাম করা যায়। তবে অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং যেহেতু একটি অনলাইনে টাকা ইনকাম করার মূল মাধ্যম, তাই কয়েকটি নিয়ম কানুন জেনেই তারপর ব্যবসা শুরু করা উচিৎ। নতুবা লাভের বদলে সময় নষ্ট হবার সম্ভাবনাই বেশি।
Affiliate Marketing business plan for beginners
দিন যত বাড়ছে জিনিসপত্রের দামও দ্বিগুণ তিন গুন পরিমাণে বৃদ্ধি পাচ্ছে। এই কারণে বর্তমানে বাড়িতে বসে কাজ বা Work From Home এর চাহিদা বিপুল পরিমাণে বৃদ্ধি পেয়েছে। তার মধ্যেও Affiliate Marketing একটি গুরুত্বপূর্ণ বিকল্প হিসেবে সাহায্য করছে বাড়ির গৃহিণীদের। যেখানে কোনরকম আর্থিক বিনিয়োগ ছাড়াই অনায়াসে একটি ব্যবসা শুরু করা যায় এবং প্রতিমাসে ন্যূনতম ৫০,০০০ টাকা থেকে ১ লক্ষ টাকা পর্যন্ত রোজগার করার সুযোগ থাকে। ভারতীয় সমাজ উন্নত হওয়ার পাশাপাশি বাড়ছে অনলাইনে মার্কেটিং এবং একাধিক অনলাইন পরিষেবা। সেই কারণেই বর্তমানে বিপুল পরিমাণে জনপ্রিয়তা পেয়েছে অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং।
অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং কি এবং কিভাবে করে?
বিনিয়োগ ছাড়াই নিজের নামে ব্যবসা শুরু করার দুর্দান্ত উপায় হল অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং। বর্তমানে সোশ্যাল মিডিয়ার যুগে এই ব্যবসার আইডিয়া বিপুল পরিমাণে জনপ্রিয় হচ্ছে মহিলাদের মধ্যে। তাই ঘরের বিভিন্ন কাজ সামলে অনলাইনে বিপুল সংখ্যক গ্রাহকের কাছে পৌঁছে গিয়ে মাসে হাজার হাজার টাকার রোজগার করার এই উপায়টি যথেষ্ট সহজসাধ্য বাড়ির গৃহিণীদের জন্য।
অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং কি?
এই প্রশ্নের উত্তর হিসাবে সহজ ভাষায় বলা যেতে পারে, কোনরকম বিনিয়োগ ছাড়া শাড়ি, গহনা বা নিত্য প্রয়োজনীয় যে কোন জিনিস বিক্রির ব্যবসা। এক্ষেত্রে আপনাকে অনলাইনে বিভিন্ন প্রয়োজনীয় জিনিসের প্রচার করে সেটিকে বিক্রি করতে হবে। আপনি যদি সঠিকভাবে এই বিক্রি করতে পারেন তাহলে আসল বিক্রয় মূল্যের উপর আপনার লাভের পরিমাণ যুক্ত করে বিক্রি করতে পারেন অথবা যে কোম্পানির প্রোডাক্ট আপনি বিক্রি করছেন, তাদের থেকেও মোটা অংকের কমিশন নিতে পারেন।
অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং কিভাবে কাজ করে?
অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং সবথেকে ভালো কাজ করে অনলাইন মাধ্যমে। কোন জিনিস বিক্রি করার ক্ষেত্রে অফলাইনে সবার আগে সেই জিনিসটি আপনাকে কোন হোলসেল মার্কেট থেকে কিনে আনতে হয় এবং তারপর একটি দোকান সাজিয়ে বসে সেখানে বিক্রি করার সুযোগ মেলে। কিন্তু এফিলিয়েট মার্কেটিং এর ক্ষেত্রে এই ধরনের বিনিয়োগ এক পয়সাও প্রয়োজন হয় না। এক্ষেত্রে আপনি যে কোন কোম্পানির প্রোডাক্ট বেছে নিয়ে আপনার ফেসবুক পেজে সেই প্রোডাক্টের রিভিউ শেয়ার করতে পারেন।
এর পাশাপাশি সেখানে আপনাকে একটি ইউনিক অ্যফিলিয়েট লিংক যুক্ত করে দিতে হবে। এক্ষেত্রে আপনার রিভিউ শেয়ার করা প্রোডাক্টটি দেখে যদি অন্য কোন মানুষ সেটি কেনার জন্য আপনার প্রদত্ত লিঙ্কটিতে ক্লিক করেন এবং জিনিসটি কিনে নেন, সেই ক্ষেত্রে একটি অতিরিক্ত বোনাস কমিশন পাবেন আপনি।
অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং এর সুবিধা
- অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং এর জন্য কোনরকম অর্থ বিনিয়োগ করতে লাগেনা।
- কোন প্রোডাক্ট তৈরি করা কিংবা কিনে এনে নিজের কাছে সঞ্চিত করার কিংবা দোকান খুলে বসার প্রয়োজন নেই।
- দিনের যেকোনো সময়ে অনলাইন মাধ্যমে প্রোডাক্টের রিভিউ শেয়ার করে এই কাজ শুরু করা যেতে পারে।
- আপনার ইউনিক অ্যাফিলিয়েট লিংক এর মাধ্যমে যে প্রোডাক্ট বিক্রি হচ্ছে
- তার সার্ভিস বা কাস্টমার কেয়ারের দায় আপনার নয়।
অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং কিভাবে শুরু করবেন?
এফিলিয়েট মার্কেটিং এর মাধ্যমে রোজগার শুরু করার জন্য আপনাকে নিম্নলিখিত প্রত্যেকটি ধাপ অনুসরণ করতে হবে-
অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং ওয়েবসাইট
সম্পূর্ণ বিনামূল্যে অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং শুরু করার জন্য আপনাকে সবার আগে যে কোন অনলাইন সোর্স বেছে নিতে হবে। এক্ষেত্রে আপনি অ্যামাজন অ্যাসোসিয়েট (Amazon Associates), শেয়ার এ সেল (ShareASale), ক্লিক ব্যাংক (ClickBank), ফ্লিপকার্ট অ্যাফিলিয়েট (Flipkart Affiliate), হোস্টিঙ্গার বা ব্লু হোস্ট অ্যাফিলিয়েট (Hostinger / Bluehost Affiliate) এরমধ্যে যে কোন একটি বা একাধিক সাইট বেছে নিতে পারেন। এরপর সেই সমস্ত প্লাটফর্মে সাইন আপ করে নিজের একটি অনলাইন প্রোফাইল তৈরি করতে হবে।
মার্কেটিং এর জন্য প্রোডাক্ট নির্বাচন
একবার আপনার সমস্ত সাইটে প্রোফাইল খুলে গেলে আপনি যে বিষয়ে বা যে ধরনের প্রোডাক্ট বিক্রি করতে আগ্রহী রয়েছেন, সেই প্রোডাক্ট বা কনটেন্ট বেছে নিতে হবে। এক্ষেত্রে আপনি নিজের ইচ্ছা অভিজ্ঞতা বা বাজারের চাহিদা বিবেচনা করে ফ্যাশন বা বিউটি প্রোডাক্ট, যেকোনো ইলেকট্রনিক গেজেট, অনলাইন লার্নিং বা কোর্স, ইনভেস্টমেন্ট প্রোডাক্ট ইত্যাদির মধ্যে যেকোনো বিকল্প বেছে নিতে পারেন।
কনটেন্ট প্লাটফর্ম তৈরি
আপনি Affiliate Marketing এর জন্য কোন অনলাইন প্লাটফর্ম বেছে নিতে চান, তার ডিটেলস শেয়ার করতে হবে। এক্ষেত্রে আপনি আপনার ইউটিউব চ্যানেল, ব্লগিং পেজ, ইনস্টাগ্রাম বা ফেসবুকের মতো সোশ্যাল মিডিয়া সাইট ব্যবহার করতে পারেন।
আকর্ষণীয় কনটেন্ট তৈরি
উপরে উল্লেখিত সমস্ত ধাপ গুলি অনুসারে কাজ হয়ে গেলে আপনি এবার অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং শুরু করার জন্য একেবারে উপযোগী হয়ে উঠবেন। এরপর আপনি সারাদিনে আপনার নিজের অবসর সময়মতো কন্টেন্ট আপলোড করবেন এবং তার সাথে অ্যাফিলিয়েট লিংক যুক্ত করে দেবেন। এক্ষেত্রে অবশ্যই যে রিভিউ বা ছবি আপনি পোস্ট করছেন, সেটি যথেষ্ট পরিমাণে ইনফরমেটিভ এবং ভিজুয়ালি আকর্ষণীয় হতে হবে।
SEO ও ট্রাফিক বাড়ানোর পদ্ধতি
অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং এর ক্ষেত্রে আপনার সাধারণ সোশ্যাল মিডিয়ার সাইট বা ইউটিউব ব্যবহার করলেও সেই ক্ষেত্রে আপনাকে ওই সোশ্যাল মিডিয়া প্লাটফর্ম এর সঠিক SEO জানতে হবে। SEO ছাড়া কোনভাবেই অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং করে আপনি বিপুলসংখ্যক জনগণের কাছে পৌঁছতে পারবেন না। এরপরে আপনার লাভও হবে না। SEO করার জন্য আপনি গুগল কিওয়ার্ড এর মাধ্যমে জনপ্রিয় কিওয়ার্ড বেছে নিতে পারেন, Ubersuggest এর মাধ্যমে আপনার প্রতিযোগীদের কাজ পর্যবেক্ষণ করতে পারেন এবং আকর্ষণীয় প্রফেশনাল থাম্বনেইল এর জন্য Canva ব্যবহার করতে পারেন।
কিভাবে সাফল্য আসবে?
যেকোনো ব্যবসা শুরু করার মতোই অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং শুরুর সময় আপনাকে যথেষ্ট পরিমাণে ধৈর্যশীল হতে হবে। প্রথম দিকে আপনার ব্যবসা তেমনভাবে প্রচার না পেলেও সঠিক SEO বা ওয়েবসাইট ম্যানেজমেন্ট করতে পারবে ধীরে ধীরে ব্যবসায় উন্নতি দেখতে পারবেন। এক্ষেত্রে উন্নতি করার জন্য আপনাকে অবশ্যই সত্যিকারের রিভিউ শেয়ার করতে হবে এবং বিশ্বাসযোগ্যতা গড়ে তুলতে হবে। এর পাশাপাশি ভবিষ্যতে প্রমোশন বা ব্র্যান্ডিংয়ের কাজে এগিয়ে যাওয়ার জন্য ইমেল লিস্ট তৈরি করে রাখতে পারেন।
আরও পড়ুন, বিনা পুঁজিতে বাড়ি বসে ব্যবসা করার আরেকটি দুর্দান্ত উপায় দেখে নিন।
উপসংহার
দেশ যেভাবে সমাজ মাধ্যম কেন্দ্রীক হয়ে উঠেছে, তাতে ২০২৫ সালের মধ্যেই দেশের ই-কমার্স বাজার হতে পারে ১০০ বিলিয়ন ডলার বা তার বেশি। অনলাইন কেনাকাটির জন্য অনেকেই ভালো রিভিউ দেখে তবেই সেই সমস্ত প্রোডাক্ট কিনে থাকেন। তাই এই বিষয়ে Affiliate Marketing যথেষ্ট পরিমাণে জনপ্রিয়তা লাভ করছে। সম্পূর্ণ শূন্য মূলধনে বাড়ির গৃহিণী থেকে শুরু করে অফিস যাত্রী ব্যক্তি পার্ট টাইম কাজ হিসেবে বেছে নিতে পারেন এফিলিয়েট মার্কেটিং কে। আজকের প্রতিবেদনের মাধ্যমে অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং সম্পূর্ণ গাইড আপনাদের সঙ্গে শেয়ার করা হলো। তাই আর বেশি দেরি না করে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব এই কাজ শুরু করে দিন এবং প্রতিদিন রোজগারের মাধ্যমে জনপ্রিয় হয়ে উঠুন।