সায়েন্স আর্টস না কমার্স, মাধ্যমিকের পর কি নিয়ে পড়বেন? কোন কোর্সে ভালো চাকরির সুযোগ বেশি?

বর্তমানে প্রতিযোগিতার বাজারে ভালো কেরিয়ার অপশন (Best Career options after Madhyamik) বেছে না নিলে টিকে থাকা অসম্ভব। তাই মাধ্যমিকের পর কি নিয়ে পড়বো? এটাই ভালো কেরিয়ারের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত। আর এই সিদ্ধান্তের মধ্যে প্রথমই বেছে নিতে হয় সায়েন্স আর্টস আর কমার্সের মধ্যে একটি। আর এই সিদ্ধান্তটাই নির্ভর করে ভবিষ্যৎ কোন দিকে যাবে। সায়েন্স মানেই ভালো আর আর্টস মানেই খারাপ, এই ধরনের একটা ধারনা আজও সমাজের একাংশের মধ্যে প্রচলিত রয়েছে। যার জেরে চাপে পড়ে অনেকেই তার কেরিয়ার বরবাদ করেছে। তাই সায়েন্স আর্টস না কমার্স এই সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে নিচের বিশয়গুলো মনে রাখা জরুরী।

এক ঝলকে ~

মাধ্যমিকের পর সায়েন্স আর্টস না কমার্স?

মাধ্যমিকের (১০ম শ্রেণী) পরীক্ষার ফলাফল ঘোষণার পর, শিক্ষার্থীরা একটি বড় প্রশ্নের সম্মুখীন হয়: “মাধ্যমিকের পর কি নিয়ে পড়বো?” সায়েন্স, আর্টস না কমার্স বা After Madhyamik which course is best? —এই প্রশ্নটির সঠিক উত্তর খোঁজা কখনও কখনও অত্যন্ত কঠিন হতে পারে। আপনি যদি একজন মাধ্যমিক ছাত্র বা ছাত্রী হয়ে থাকেন, তবে এই সিদ্ধান্তটি গ্রহণের জন্য আপনাকে আপনার আগ্রহ, দক্ষতা এবং ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা বুঝে সিদ্ধান্ত নিতে হবে।

মাধ্যমিকের পর প্রায় সব শিক্ষার্থীর জন্য তিনটি প্রধান পেশাগত দিক রয়েছে— সায়েন্স আর্টস না কমার্স। এই প্রতিবেদনটি আপনাকে সেই তিনটি পথের পর্যালোচনা করে সাহায্য করবে, যাতে আপনি আপনার ভবিষ্যত ক্যারিয়ার নিয়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারেন।

🔶 সায়েন্স আর্টস না কমার্স: কীভাবে সিদ্ধান্ত নেবেন?

এই তিনটি শাখার মধ্যে কোনটি বেছে নেবেন, সে সিদ্ধান্তের জন্য আপনাকে প্রথমে কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় বিবেচনা করতে হবে:

নিজের আগ্রহ এবং মনোভাব

আপনি কোন বিষয়ে বেশি আগ্রহী? আপনি কি বিজ্ঞান এবং প্রযুক্তির বিষয়ে আগ্রহী, না সমাজ এবং মানুষকে বুঝতে চান?

দক্ষতা ও ক্ষমতা

আপনার মনোযোগ এবং দক্ষতা কোন শাখার জন্য বেশি উপযুক্ত? আপনি কি গণিত ভালো করেন, নাকি ইতিহাস এবং সাহিত্য নিয়ে ভালোবাসা রয়েছে?

ভবিষ্যতের সম্ভাবনা

আপনি মাধ্যমিকের পর যে শাখাটি (Best Career options after Madhyamik) বেছে নেবেন, তার ভবিষ্যতের জন্য সুযোগ কেমন হবে? এই ক্ষেত্রের জন্য কর্মসংস্থান কেমন রয়েছে?

🔶 সায়েন্স (বিজ্ঞান শাখা): যদি গণিত এবং বিজ্ঞানের প্রতি আগ্রহ থাকে

বিজ্ঞান শাখা এমন একটি ক্ষেত্র যেখানে আপনি গাণিতিক সমস্যা সমাধান, জীববিজ্ঞান নিয়ে কাজ, পদার্থবিজ্ঞান এবং রসায়ন নিয়ে গবেষণা করতে পারবেন। এটি এমন শিক্ষার্থীদের জন্য উপযুক্ত, যারা যুক্তিবাদী এবং বিশ্লেষণাত্মক চিন্তাভাবনায় আগ্রহী।

সায়েন্সের প্রধান শাখাগুলি

১. মেডিকেল (Medical Course)

যদি আপনি মানুষের স্বাস্থ্য এবং চিকিৎসা বিষয়ে আগ্রহী হন, তবে আপনি মেডিকেল সেক্টরে ক্যারিয়ার তৈরি করতে পারেন। মেডিকেল ক্ষেত্রের মধ্যে MBBS, BDS, Nursing, Pharmacy, এবং Veterinary Science সহ আরও অনেক কোর্স রয়েছে।

২. ইঞ্জিনিয়ারিং (Engineering Course)

সায়েন্স শাখায় পড়াশোনা করলে আপনি বিভিন্ন ধরনের B.Tech বা B.E. কোর্স বেছে নিতে পারেন। এই শাখাগুলির মধ্যে রয়েছে Civil Engineering, Mechanical Engineering, Electrical Engineering, Computer Science Engineering, Aerospace Engineering Career options ইত্যাদি।

আরও পড়ুন, দেশের সেরা পলিটেকনিক ও বিটেক ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের তালিকা ও ভর্তি প্রক্রিয়া।

৩. বায়োটেকনোলজি, ডেন্টাল, ফার্মাসি

সায়েন্সে জীববিজ্ঞানে আগ্রহী হলে B.Sc. Biotechnology, Dentistry, অথবা Pharmacy পড়তে পারেন। এগুলোর মাধ্যমে আপনি স্বাস্থ্য এবং প্রযুক্তির মাঝে একটি গুরুত্বপূর্ণ সংযোগ স্থাপন করতে পারবেন।

সায়েন্স শাখা বেছে নেওয়ার সুবিধা

  • সায়েন্স শাখা পড়লে ভবিষ্যতে বেশ কয়েকটি উচ্চতর এবং লাভজনক ক্যারিয়ার গড়ার সুযোগ থাকে।
  • মেডিকেল এবং ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের মতো ক্ষেত্রগুলো বর্তমানে অনেক সম্ভাবনাময়, এবং এই পেশাগুলির জন্য রয়েছে প্রচুর চাকরির সুযোগ।
  • সায়েন্স শাখা বেছে নিলে আপনি বিভিন্ন শাখায় বৈশ্বিক স্তরে কাজ করতে পারবেন, যা ভবিষ্যতের জন্য লাভজনক হতে পারে।

🔶 আর্টস (Humanities) শাখা: সৃজনশীলতার জন্য উপযুক্ত

আর্টস শাখা এমন একটি জায়গা যেখানে আপনার সৃজনশীলতা, সমাজ বিজ্ঞান, ইতিহাস, দর্শন, মনোবিজ্ঞান, রাজনীতি ইত্যাদি বিষয়ে আগ্রহ পূর্ণ হতে পারে। আপনি যদি কোনও নির্দিষ্ট বিষয় বা সামাজিক পরিবর্তন নিয়ে ভাবতে চান, অথবা লেখালেখি বা গবেষণায় আগ্রহী হন, তবে আর্টস শাখা আপনার জন্য উপযুক্ত।

আর্টস শাখার প্রধান বিষয়গুলি

১. সাংবাদিকতা ও গণমাধ্যম (Journalism & Mass Communication)

আপনি যদি লেখালেখি, সংবাদ সংগ্রহ, বা মিডিয়ায় কাজ করতে চান, তাহলে সাংবাদিকতা বা গণমাধ্যমের দিকে যেতে পারেন। এটি বর্তমান সময়ে একটি অত্যন্ত জনপ্রিয় এবং লাভজনক ক্যারিয়ার অপশন।

মনোবিজ্ঞান (Psychology)

মনোবিজ্ঞানী হতে চাইলে আপনি B.A. Psychology অথবা M.A. Psychology করতে পারেন। এটি সমাজে মানুষের মানসিক স্বাস্থ্য এবং আচরণ নিয়ে কাজ করার একটি চমৎকার ক্ষেত্র।

রাজনীতি এবং আন্তর্জাতিক সম্পর্ক (Political Science & International Relations)

যদি আপনি দেশের রাজনীতি, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক, বা প্রশাসনিক কাঠামো নিয়ে আগ্রহী হন, তাহলে এই বিষয়ে উচ্চশিক্ষা নেওয়া যেতে পারে।

শিক্ষকতা এবং গবেষণা (Teaching & Research)

আপনি যদি ইতিহাস, ভূগোল, সাহিত্য বা ভাষাবিদ্যা নিয়ে কাজ করতে চান, তবে শিক্ষক বা গবেষক হতে পারেন। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে এই বিষয়ে গবেষণা এবং অধ্যাপনাও একটি চমৎকার ক্যারিয়ার।

আর্টস শাখা বেছে নেওয়ার সুবিধা

  • সমাজ, মনোবিদ্যা, সাহিত্য, এবং ইতিহাস নিয়ে আপনার চিন্তাভাবনা আরো গভীর হতে পারে।
  • সৃজনশীল এবং যুক্তির উপর ভিত্তি করে গবেষণা ও লেখালেখি করার সুযোগ থাকে।
  • অনেক সামাজিক সেবা এবং রাষ্ট্রীয় সংগঠনে কাজ করার সুযোগ রয়েছে।

🔶 কমার্স (বাণিজ্য) শাখা: অর্থনীতি এবং ব্যবসায়িক জ্ঞান অর্জন

কমার্স এমন এক শাখা, যেখানে আপনি আর্থিক লেনদেন, ব্যবসায়িক কৌশল, হিসাব, এবং বাজার নিয়ন্ত্রণ সম্পর্কে জানতে পারেন। যারা ব্যবসায়িক মনোভাব পছন্দ করেন বা আর্থিক বিষয়ক কাজ করতে চান, তাদের জন্য কমার্স একটি আদর্শ শাখা হতে পারে।

কমার্স শাখার প্রধান বিষয়গুলি

১. অ্যাকাউন্টিং (Accounting)

আপনি CA (Chartered Accountant), CMA (Cost Management Accountant), বা CS (Company Secretary) হতে পারেন। এটি একটি চমৎকার ক্যারিয়ার পথ যেটি ব্যবসা এবং অর্থনীতি সম্পর্কিত গভীর জ্ঞান দেয়।

ব্যাংকিং এবং ফাইন্যান্স (Banking & Finance)
  • আপনি যদি অর্থনৈতিক কাঠামো এবং ব্যাংকিং সিস্টেমে আগ্রহী হন, তাহলে IBPS বা SBI PO পরীক্ষা দিয়ে ব্যাংকিং সেক্টরে চাকরি পেতে পারেন।
  • ব্যবস্থাপনা (Management): ব্যবসায়িক পরিবেশে দক্ষতা অর্জনের জন্য BBA এবং MBA কোর্সের মাধ্যমে আপনার ক্যারিয়ার তৈরি করতে পারেন।
  • বীমা এবং মিউচুয়াল ফান্ড (Insurance & Mutual Fund): আপনি বীমা সংস্থা বা মিউচুয়াল ফান্ডের মতো আর্থিক সেবার ক্ষেত্রেও কাজ করতে পারেন।

কমার্স শাখা বেছে নেওয়ার সুবিধা

  • ব্যবসা, অ্যাকাউন্টিং, অর্থনীতি, এবং ব্যাংকিংয়ের মতো পেশাগুলিতে চাকরির সুযোগ ব্যাপক।
  • বিশ্বব্যাপী ব্যবসায়িক উন্নয়ন এবং আর্থিক ব্যবস্থাপনায় কাজ করার জন্য এই শাখা উপযুক্ত।
  • প্রতিষ্ঠানের উচ্চপদে কাজ করার সুযোগ থাকে, যেমন CFO, CEO, ব্যাংক ম্যানেজার, বা অর্থনৈতিক বিশ্লেষক।

আরও পড়ুন, পশ্চিমবঙ্গে মাধ্যমিক পাশের পর সেরা স্কলারশিপ। কত টাকা পাবেন ও আবেদন প্রক্রিয়া জেনে নিন।

🔶 ক্যারিয়ার গাইডেন্স: কিছু গুরুত্বপূর্ণ টিপস

নিজের আগ্রহ জানুন

আপনার আগ্রহটি কোন শাখায় সবচেয়ে বেশি? আপনি কোন বিষয়ে পড়তে চান? এটি পরিষ্কারভাবে বুঝে নিন। লোকের কথা শুনে সায়েন্স নিয়ে ফেল করার চেয়ে নিজের পছন্দ মতো বিষয় নিয়ে পড়ে ভালো রেজাল্ট করা শ্রেয়। যে বিশয়ি হোক ভালো রেজাল্টের কদর সর্বত্র।

পেশাগত পরামর্শ নিন

শিক্ষক, অভিভাবক বা ক্যারিয়ার কনসালট্যান্টের সাহায্য নিন। তাঁরা আপনাকে সঠিক পথে পথপ্রদর্শন করতে সাহায্য করতে পারেন। তবে আপনি কোন বিষয়ে পারদর্শী সেটা অবশ্যই পরামর্শদাতাকে জানাবেন।

শিক্ষাগত যোগ্যতা এবং দক্ষতা মূল্যায়ন করুন

আপনার শক্তি এবং দুর্বলতার প্রতি সতর্ক থাকুন। এক্ষেত্রে মাধ্যমিকের রেজাল্ট ভালো অপশন হতে পারে। সেটা দেখলেই ধারনা পাবেন, কোন বিষয়ে আপনার সবলতা ও দুর্বলতা রয়েছে।

🔶 শেষ কথা

মাধ্যমিকের পর ক্যারিয়ার বেছে নেওয়া একটা বড় সিদ্ধান্ত। তবে, এটাই আপনার ভবিষ্যতের জন্য অনেকটা পথ নির্ধারণ করবে। তাই নিজের আগ্রহ ও দক্ষতার দিকে নজর দিয়ে সঠিক পথটি বেছে নিন। সায়েন্স, আর্টস, না কমার্স— যা-ই বেছে নিন, সেই পথে নিজের ১০০% দিন এবং নিজেকে সফলতার শীর্ষে নিয়ে যান। প্রতিবেদনটি সকলকে শেয়ার করার অনুরোধ রইলো।

শেয়ার করুন: Sharing is Caring!