গত ২২ এপ্রিল জম্মু ও কাশ্মীরের পহেলগাঁও-তে ঘটে যাওয়া ঘটনার যোগ্য জবাব দিলো ভারতীয় সেনা। অপারেশন সিঁদুর বা Operation Sindoor Mission এর মাধ্যমে বেছে বেছে ৯টি ঘাটি গুড়িয়ে দিয়েছে ভারত। তবে এই মিশনের প্ল্যানিং কবে থেকে শুরু হয়, অপারেশন সিঁদুর নামটি কে দিয়েছেন। পাকিস্তান পাল্টা আক্রমন করলে কিভাবে প্রতিরোধ করা হবে, জেনে নিন বিস্তারিত।
🔶 অপারেশন সিঁদুর: এক প্রেক্ষাপটের জন্ম
২০২৫ সালের ২২ এপ্রিল, জম্মু ও কাশ্মীরের পহেলগাঁও-তে ঘটে যায় এক বিভীষিকাময় ঘটনা। একসঙ্গে প্রাণ হারান ২৬ জন নির্দোষ ভারতীয় নাগরিক। এই নির্মম হত্যাকাণ্ডের দায় স্বীকার করে জইশ-ই-মোহম্মদ নামক জঙ্গি সংগঠন। এই রক্তাক্ত ঘটনার ঠিক পরেই দিল্লির লালভবনে আলোড়ন ওঠে। প্রতিশোধ আসবেই — ঠিক এমন মনোভাব নিয়ে ভারতের নিরাপত্তা মহলে শুরু হয় এক নিরব, গোপন পরিকল্পনা। জন্ম নেয় ‘অপারেশন সিন্দুর’।
🔶 পরিকল্পনার সূচনা: নেপথ্যে অজিত ডোভাল
এই Operation Sindoor বিশেষ অভিযানের পরিকল্পনার মূল কারিগর ছিলেন ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভাল। গত ২২ এপ্রিলের পরই এই মিশনের প্ল্যানিং এর দায়িত্ব তাঁকে দেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী (India PM Narendra Modi). গোয়েন্দা তথ্য বিশ্লেষণ করে অজিত ডোভাল বুঝে ফেলেন — এবার পাল্টা আঘাত দরকার, তবে কৌশলে, নিখুঁতভাবে। সেনাবাহিনী, বায়ুসেনা, গোয়েন্দা সংস্থা NTRO, ও সামরিক কৌশলবিদদের নিয়ে গড়ে তোলা হয় একটি বিশেষ দল।
দিল্লির গোপন এক স্থানে গড়ে ওঠে একটি নিয়ন্ত্রণ কক্ষ— যেখান থেকে অপারেশনের প্রতিটি পদক্ষেপ মনিটর করা হয়। পুরো অভিযান চলে নীরবে, যাতে কোনো তথ্য বাইরে না যায়।
🔶 প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক: অপারেশন চূড়ান্ত
অজিত ডোভাল তাঁর পরিকল্পনার খসড়া নিয়ে একাধিকবার বৈঠক করেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে। তাঁরা ঠিক করেন— এ বার পাল্টা জবাব দিতে হবে, তবে তা যেন শুধুমাত্র জঙ্গি ঘাঁটি লক্ষ্য করে হয়। কোনওভাবেই যেন সাধারণ নাগরিক বা পাক সেনা এই আক্রমণের লক্ষ্য না হয়।
প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে ‘সবুজ সংকেত’ মিলতেই জোর কদমে মিশন প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া শুরু হয়।
আরও পড়ুন, আধার কার্ড প্যান কার্ড নাগরিকত্বের প্রমাণ নয়। ভারতীয় হতে হলে এই নথি থাকতে হবে
🔶 তথ্য সংগ্রহ ও লক্ষ্য নির্ধারণ: নজরে ৯টি ঘাঁটি
প্রথম ধাপে গোয়েন্দারা চিহ্নিত করেন পাকিস্তান ও পাক-অধিকৃত কাশ্মীরের ৯টি জঙ্গি ঘাঁটি। এই ঘাঁটিগুলিতে আশ্রয় নিয়েছিল জইশ-ই-মোহম্মদ, লস্কর-ই-তৈয়বা, ও হিজবুল মুজাহিদিনের মতো কুখ্যাত জঙ্গি সংগঠন।
তথ্য অনুসারে, এই ঘাঁটিগুলিতে প্রায় ৯০০ জঙ্গি অবস্থান করছিল। অজিত ডোভালের নেতৃত্বে তৈরি হয় প্রত্যাঘাতের ব্লুপ্রিন্ট।
🔶 অপারেশন সিন্দুর শুরু: নিশা নামে এক নিরব বিস্ফোরণ
২০২৫ সালের ৬ মে, রাতের গভীরে, ডোভালের নির্দেশে শুরু হয় ‘অপারেশন সিন্দুর’ (Operation Sindoor). অত্যাধুনিক রাফাল যুদ্ধবিমান আকাশে ওড়ে এবং নিশানা করে একের পর এক জঙ্গি ঘাঁটি। ব্যবহৃত হয় ভয়ঙ্কর বিধ্বংসী স্কাল্প মিসাইল, যার প্রতিটির ওজন প্রায় ১৩০০ কেজি।
ধ্বংস হয়:
- বাহাওয়ালপুর (জইশ)
- মুরিদকে (লস্কর)
- শিয়ালকোট (হিজবুল)
- মুজফ্ফরাবাদ,
- কোটলি, ভীমবের, গুলপুর,
- চক আমরু (পাক অধিকৃত কাশ্মীরের ঘাঁটি)
প্রতিটি জায়গায় শুধু সন্ত্রাসবাদীদের অবস্থানকে লক্ষ্য করে আঘাত হানা হয়— কোনো বেসামরিক ক্ষতি হয়নি।
🔶 ফলাফল: প্রতিশোধের পূর্ণতা
অপারেশনের প্রাথমিক রিপোর্ট জানায় — ১০০-১২০ জন জঙ্গির মৃত্যু হয়েছে। ধ্বংস হয়েছে তাদের অস্ত্রাগার, পরিকল্পনাকেন্দ্র ও লজিস্টিক সাপোর্ট বেস।
প্রতিরক্ষা মন্ত্রী রাজনাথ সিং এক বিবৃতিতে বলেন,
“নির্দোষদের হত্যা করেছে যারা, শুধু তাদেরই জবাব দিয়েছি আমরা।”
🔶 পাকিস্তান ও আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া
পাকিস্তান এই হামলাকে ‘সার্বভৌমত্বের লঙ্ঘন’ হিসেবে আখ্যা দিয়ে প্রতিশোধের হুমকি দেয়।
অন্যদিকে, যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া, চীন ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন উদ্বেগ প্রকাশ করে এবং দুই দেশকে শান্তি বজায় রাখার আহ্বান জানায়।
আরও পড়ুন, পশ্চিমবঙ্গে জরুরী পরিস্থিতিতে সরকারি কর্মীদের ছুটি বাতিল। সমস্ত সরকারি ও প্রাইভেট স্কুল ছুটি ঘোষণা
🔶 উপসংহার: এক নতুন বার্তা ভারতের তরফে
‘অপারেশন সিন্দুর’ ছিল শুধুমাত্র একটি সামরিক প্রতিশোধ নয়, বরং এক কৌশলগত বার্তা— যে ভারত আর আগের মতো সহ্য করবে না। এখনকার ভারত জানে কীভাবে প্রতিশোধ নিতে হয়, কীভাবে কূটনৈতিক ও সামরিক ব্যালান্স বজায় রাখতে হয়।
এই অপারেশন ইতিহাসে স্থান পাবে এক নিশাবিরোধী বিস্ফোরণের প্রতীক হিসেবে— যেখানে ন্যায়বিচারের আগুন জ্বলে উঠেছিল সিন্দুরের মতো উজ্জ্বল এক প্রতিশোধে। তবে পাকিস্তান তার পাল্টা দিলে তৈরি আছে ভারতীয় সেনা। ত্রিস্তরীয় এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম রয়েছে ভারতের। এদিকে Operation Sindoor মিশনের মাধ্যমে ভারত একদিকে যেমন পাকিস্তান কে কড়া জবাব দিলো, আরেকদিকে ধর্মীয় ঐক্য ও নারী সম্মানের ও প্রদর্শন হলো।