কন্যাশ্রী প্রকল্পে আরও বেশি টাকা পাবেন। পশ্চিমবঙ্গের ছাত্র ছাত্রীদের জন্য বড় ঘোষণা

পশ্চিমবঙ্গের ছাত্রীদের কন্যাশ্রী প্রকল্প (Kanyashree Prakalpa) নিয়ে এবার বড় ঘোষণা করল পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকার। এখন থেকে আর আবেদন করলেই যে কাউকে টাকা দেওয়া হবে না। আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স (AI) এর মাধ্যমে উপযুক্ত আবেদনকারীদের বাছাই করে নির্বাচন করা হবে। এই প্রকল্প মূলত অভাবী মেয়েদের জন্য চালু করা হয়েছিল, যাতে তারা পড়াশোনা চালিয়ে যেতে পারে এবং বাল্যবিবাহ এড়াতে পারে। তবে, সাম্প্রতিক রিপোর্টে উঠে এসেছে, অনেক স্বচ্ছল পরিবারও এই অনুদানের সুবিধা নিচ্ছে, যাদের আদৌ এই টাকার প্রয়োজন নেই। এই সমস্যা দূর করতেই এবার কড়াকড়ি বাড়াচ্ছে রাজ্য সরকার। কন্যাশ্রী প্রকল্পে একমাত্র দরিদ্র এবং প্রকৃত প্রয়োজনীয়তাসম্পন্ন মেয়েরাই যেন সুবিধা পান, তা নিশ্চিত করতে এআই প্রযুক্তি ব্যবহার করা হবে।

কন্যাশ্রী প্রকল্প কি?

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সফল প্রকল্পগুলির মধ্যে অন্যতম এই কন্যাশ্রী। ২০১৩ সালে শুরু হওয়া এই প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য ছিল রাজ্যের মেয়েদের স্কুলছুট রোধ করা এবং বাল্যবিবাহ ঠেকানো। প্রথম পর্যায়ে, ১৩ থেকে ১৮ বছর বয়সী অবিবাহিত স্কুলছাত্রীদের বছরে ১,০০০ টাকা দেওয়া হয়। এরপর দ্বিতীয় পর্যায়ে, ১৮ বছর পর্যন্ত পড়াশোনা চালিয়ে গেলে এককালীন ২৫,০০০ টাকা অনুদান হিসেবে দেওয়া হয়। এই অর্থ মেয়েদের উচ্চশিক্ষা এবং স্বনির্ভরতার পথে এগিয়ে যেতে সহায়তা করে।

AI কীভাবে বাছাই করবে যোগ্য আবেদনকারী?

তুন প্রযুক্তির মাধ্যমে আবেদনকারীদের আর্থিক ও পারিবারিক পটভূমি বিশ্লেষণ করা হবে। রাজ্য সরকারের কাছে থাকা বিভিন্ন ডাটাবেসের তথ্য মিলিয়ে দেখা হবে—

  • Kanyashree Prakalpa আবেদনকারীর পরিবারের বার্ষিক আয়
  • অভিভাবকদের পেশা ও আর্থিক অবস্থা
  • ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের লেনদেনের হিসাব
  • অন্য সরকারি প্রকল্প থেকে কোনও আর্থিক সুবিধা পাচ্ছে কি না

যদি কোনও আবেদনকারী স্বচ্ছল পরিবারের সদস্য হন, তবে এআই স্বয়ংক্রিয়ভাবে তাঁকে বাতিলের তালিকায় ফেলবে। এর ফলে প্রকৃত অভাবী মেয়েরা এই সুবিধা পাবে এবং প্রকল্পের স্বচ্ছতা বজায় থাকবে।

কেন এই পরিবর্তন আনা হচ্ছে?

সরকারের এক উচ্চপদস্থ আধিকারিক জানান, “কন্যাশ্রী প্রকল্পের উদ্দেশ্য হল দরিদ্র মেয়েদের সাহায্য করা। কিন্তু, অনেক স্বচ্ছল পরিবারও এটি ব্যবহার করছে। এবার থেকে আবেদনপত্র বিশ্লেষণ করতে এআই ব্যবহার করা হবে, যাতে প্রকৃত দরিদ্ররাই সুবিধা পান।”
এছাড়া, এআই ব্যবহারের ফলে ভুল তথ্য বা জাল নথি জমা দেওয়ার প্রবণতা কমবে। অনেক ক্ষেত্রেই দেখা গেছে, উচ্চবিত্ত পরিবারগুলোর মেয়েরা প্রকৃত তথ্য গোপন করে কন্যাশ্রীর সুবিধা নিচ্ছে। কিন্তু এবার নতুন প্রযুক্তির মাধ্যমে সেইসব অনিয়ম ধরা পড়বে এবং প্রয়োজন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

নতুন নিয়মে কী কী পরিবর্তন আসবে?

✅ স্বচ্ছতা নিশ্চিত হবে – প্রকৃত দরিদ্র মেয়েরাই প্রকল্পের সুবিধা পাবেন।
✅ অবৈধ আবেদন বাতিল হবে – ভুয়ো বা স্বচ্ছল পরিবারের মেয়েদের আবেদন স্বয়ংক্রিয়ভাবে বাদ যাবে।
✅ টাকা দ্রুত পৌঁছাবে – আগের তুলনায় আরও দ্রুত প্রকৃত সুবিধাভোগীদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে টাকা পৌঁছে যাবে।

পরবর্তী পদক্ষেপ কী?

রাজ্য সরকার আগামী কয়েক মাসের মধ্যে নতুন নিয়ম কার্যকর করতে চলেছে। কন্যাশ্রী প্রকল্পে এআই প্রযুক্তি পরীক্ষামূলকভাবে চালু করা হবে এবং তার কার্যকারিতা দেখে রাজ্যব্যাপী বাস্তবায়ন করা হবে। স্কুল, ব্লক ও জেলা স্তরে প্রশাসনের সঙ্গে সমন্বয় রেখে এই প্রযুক্তির প্রয়োগ করা হবে।

আরও পড়ুন, স্বামী বিবেকানন্দ স্কলারশিপের টাকা কবে ঢুকবে? স্বামী বিবেকানন্দ স্কলারশিপ এ কত টাকা পাওয়া যায়?

সরকারের এই সিদ্ধান্তে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। অনেকেই বলছেন, এটি প্রকল্পের স্বচ্ছতা বাড়াবে, আবার কেউ কেউ মনে করছেন, যদি কোনও অভাবী পরিবার ভুলবশত বাদ পড়ে যায়, তবে তাদের জন্য বিকল্প ব্যবস্থা রাখতে হবে।

শেয়ার করুন: Sharing is Caring!