পশ্চিমবঙ্গে শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতির জেরে ২০১৬ সালের SSC মামলায় (School Service Commission) সম্পূর্ণ নিয়োগ প্যানেল গত ২২শে এপ্রিল ২০২৪ বাতিল করে দেয় কোলকাতা হাইকোর্ট (Calcutta High Court Verdict). যার জেরে চাকরি হারিয়ে পথে বসেন মোট ২৬ হাজার জন শিক্ষক শিক্ষিকা ও শিক্ষা কর্মী। এর মধ্যে যারা যোগ্য কর্মী ছিলেন, রাজ্য সরকারের উদ্যোগে তারা আদালতের সেই নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ করে মামলা করেন সুপ্রিম কোর্টে। সেই নিয়ে বড় খবর উঠে এলো।
West Bengal SSC Verdict for Teachers and Candidate
সুপ্রিম কোর্ট (Supreme Court of India) ইতিমধ্যেই হাইকোর্টের রায় (Hich Court Verdict) খারিজ করে অভিযুক্তদের চাকরি বাতিল করা নিয়ে অন্তর্বর্তীকালীন বা আপাতত ১৬ই জুলাই পর্যন্ত স্থগিতাদেশ দিয়েছে। আর পশ্চিমবঙ্গ স্কুল সার্ভিস কমিশন তথা SSC কে যোগ্য ও অযোগ্যদের তালিকা আলাদা করে জমা দিতে বলেছে। এছাড়া কাজে যোগদান করার আগে সকলকে মুচলেকা জমা দেওয়ার ও নির্দেশ দিয়েছে। তার ওপর ভিত্তি করেই ১৬ই জুলাই চূড়ান্ত রায় ঘোষণা করবে সর্বোচ্চ আদালত। কিন্তু এরই মধ্যে এমন কি হলো, যার কারণে আশঙ্কা আরো বেড়ে গেল সেই ২৬ হাজার শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মীদের?
SSC মামলায় সুপ্রিম রায়
সুপ্রিম কোর্টের অন্তর্বর্তীকালীন স্থগিতাদেশ ও বক্তব্যে খানিকটা আশা জেগেছিল কার্যত প্রকৃত যোগ্য প্রার্থী তথা শিক্ষকদের। যে তারা হয়তো চাকরি ফিরে পাবেন। কিন্তু বর্তমানে সেই আশা তো দূরে থাক, উল্টে কোর্টের তরফ থেকে বড়সড় শাস্তির ভয় করছেন তারা।
সুপ্রিম কোর্ট জানিয়েছে, যতদিন না মামলার চূড়ান্ত রায় ঘোষণা হয়, ততদিন চাকরি করতে দিতে হবে সেই অভিযুক্ত শিক্ষকদের। সেই সঙ্গে কোনো বেতনের টাকাও ইতিমধ্যে ফেরত দিতে হবে না তাদের।
তবে কোর্ট একটি শর্তেই শিক্ষকদের স্কুলে যেতে নির্দেশ দিয়েছিল। সকলকে বলা হয়েছিল চাকরিতে পুনরায় জয়েন করার আগে একটি করে মুচলেকা জমা দিতে। সেখানে তাকে বয়ান দিতে হবে, যে তিনি যদি অযোগ্য বা অবৈধ প্রমানিত হন তবে, তার চাকরী থাকবে না। এবং অবৈধ তালিকায় থাকলে বেতন ফেরত দিতে হবে। কিন্তু এই মুচলেকা জমা দেওয়া ঘিরেই সম্প্রতি বিতর্ক ও বিভ্রান্তি শুরু হয়েছে রাজ্যের শিক্ষক মহলের একাংশের মধ্যে। যার কারণে সমস্যায় পড়েছেন SSC মামলার গেরোয় কার্যত চাকরি-হারা শিক্ষকরা।
স্কুল খুলছে পশ্চিমবঙ্গে
উল্লেখ্য ভোট তথা গরমের ছুটির কারণে এতদিন বন্ধ ছিল রাজ্যের স্কুলগুলি। ভোটের রেজাল্ট ইতিমধ্যেই বেরিয়ে গেছে। এদিকে ১০ই জুন গরমের ছুটি কাটিয়ে পুনরায় স্কুলে স্কুলে পঠন পাঠন শুরু হচ্ছে। কিন্তু তার আগেই শিক্ষা দপ্তর ৩ জুন থেকে সমস্ত শিক্ষকদের স্কুলে যোগ দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। আর সেই সাথে কাজে যোগ দিয়েছেন ২৬০০০ শিক্ষকেরাও। কিন্তু আদালতের নির্দেশ মতো এখনও পর্যন্ত কোনও মুচলেকা দেওয়া হয়নি। আর সেই মুচলেকাতে কি লিখতে হবে, বা কোথায় জমা দিতে হবে, সেই বিষয়ে কোনও নির্দেশিকা বা কোন কিছু স্পষ্ট করা হয়নি বলে অভিযোগ শিক্ষকদের।
আরও পড়ুন, তাপমাত্রা না কমায় ফের গরমের ছুটি বাড়ানোর সিদ্ধান্ত। কবে খুলবে স্কুল ও সরকারি অফিস?
কি বলছেন শিক্ষা আধিকারিক?
এদিকে এক জেলা আধিকারিক এর কাছে প্রশ্ন করা হলে তিনি জানিয়েছেন, “শিক্ষা দপ্তরের তরফ থেকে সেরকম কিছুই তাদের জানানো হয়নি। হয়তো শিক্ষা দপ্তরের কাছেও সেরকম কোনো নোটিশ আসেনি। সেই কারণেই কার্যত অসুবিধায় পড়তে হচ্ছে বর্তমানে শিক্ষক শিক্ষিকাদের।” তাদের বক্তব্য একবার সেই সংক্রান্ত নির্দেশ পেলেই তারা যথারীতি কাজ করবেন। তবে আপাতত এই ঘটনাকে ঘিরেই বিভ্রান্তি সৃষ্টি হয়েছে চাকরি হারাদের মধ্যে। অনেকেরই ভয় সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ না মানলে তাদের ওপর বড়সড় কোন শাস্তি চাপবে না তো? এখনো পর্যন্ত চাকরি ফিরে পাওয়ার যেটুকু আশা রয়েছে সেটুকুও চলে যাবে না তো?
আরও পড়ুন, সরকারি কর্মীদের টাকারর প্রয়োজন হলে এখানে আবেদন করুন।
এবার কি হবে?
উল্লেখ্য, সুপ্রিম কোর্ট নির্দিষ্টভাবে জানিয়ে দিয়েছে যে মুচলেকা দিয়ে এই চাকরি ততদিনই পর্যন্ত শিক্ষকরা করতে পারবেন যতদিন না কোর্টে চূড়ান্ত রায় ঘোষণা হচ্ছে। একবার তা হলে সঙ্গে সঙ্গে যারা অযোগ্য তাদের চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হবে। এবং সেই সঙ্গেই সমস্ত বেতনের টাকাও ফেরত দিতে হবে। তবে যারা যোগ্যতার সঙ্গে চাকরি পেয়েছিলেন তাদেরকে এই মারফত চাকরি ফিরিয়ে দেবে আদালত। এবার ভোট পর্ব মিটে যাওয়ার পর এই ইস্যু আবার চলতে থাকবে নাকি প্রাইমারী টেট এর মতো এটাও হিম ঘরে চলে যাবে, সেই উত্তর মিলবে আগামী ১৬ই জুলাই। SSC মামলা নিয়ে আপনার মতামত নিচে কমেন্ট করে জানাতে পারেন।
Written by Nabadip Saha.